মার্চে বাজার ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম

বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আগামী ১ মার্চ থেকে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পাবেন জনগণ। কৃষিপণ্যের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরাপর্যায়ে দাম ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। চালের বস্তায় উৎপাদনের তারিখ, কী ধানের চাল ও দাম লেখা থাকবে। যাতে কারসাজি বন্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে এমসিসিআই (মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ) আয়োজিত ত্রৈমাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ ব্যবাসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ শুরু করেছে। আগামী ১ মার্চ থেকে জনগণ দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পাবেন। প্রতিটি কৃষিপণ্যের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে পারবেন। পুলিশিং করে বা ভোক্তা অধিকার দিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনা করার পক্ষপাতি আমি নই। চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়ের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১ মার্চ থেকে চালের বস্তার গায়ে উৎপাদন তারিখ, কী ধানের চাল, দাম লেখা থাকবে।
টিসিবির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে ৫টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মাসে একবার করে দিচ্ছি। রমজান মাসে দুইবার করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে থাকবে চাল, তেল, ছোলা, চিনি ও খেঁজুর। এ কার্যক্রম শুরু হলে বাজার নিত্যপণ্যের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে আশা করছি।
বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশন আছে যারা আগের মতো সরকারের সাথে দর কষাকষি (বারগেইন) করতে চায় না। নব্বইয়ের দশকে আমার বাবাকে দেখেছি বা আমাদের আগের প্রজন্ম রীতিমতো যুদ্ধের মনোভাব নিয়ে সরকারের সাথে বারগেইন করত, নীতি সহায়তা আদায় করে নিত। ইদানীং এ জায়গাটা সফট হয়ে গেছে। এখন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারবান্ধব হয়ে গেছে। সরকারও ব্যবসাবান্ধব হয়ে গেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে জনবান্ধব পলিসি দিতে কাজ করবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশে রমজানে পণ্যের দাম কমাতে মালিকরা নমনীয় আচরণ করেন। মক্কা-মদিনায় বড় বড় খেজুর মালিকরা খেজুর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আপনারাও এবারের রমজানে অন্তত নমনীয় হবেন দয়া করে। আপনারা ঢাকা শহরে, গাজীপুর বা আপনাদের কারখানা সংলগ্ন এলাকায় সুলভমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করুন। এতে বাজার পরিস্থিতি অনেকটা ভালো থাকবে। প্রয়োজনে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য দিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে।
এনবিআরের সমালোচনা করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এনবিআরে একটু কঠিন (ডিফিকাল্ট)। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হলেও প্রায় ৩ সপ্তাহ প্রজ্ঞাপন জারির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশ্য তাদের যৌক্তিক জায়গাও আছে। কারণ বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ভূমিকা রাখতে পারে অডিট অ্যাকাউন্টে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি দেশের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলেন। গতকাল (মঙ্গলবার) তার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার পর পাকিস্তানের নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলাম; কিন্তু তিনি উৎসাহ দেখাননি। অথচ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে এক মাসের ব্যবধানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানে এখনো সংকট, হানাহানি চলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে অনেক ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরাশক্তি পশ্চিমা দেশগুলো সব সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন; কিন্তু তারাই দাস নিয়ে কাজ করাত। ৯/১১ –এর পরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে পশ্চিমারা যে আগ্রাসন চালিয়েছে, গুয়েতেমালা কারাগার করেছে, সেই সময় কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা হয়নি। তারা সব সময় অন্যকে চাপে রাখতে চায়।