Logo
Logo
×

অর্থনীতি

‘শ্রম ইস্যুতে নয়, নিষেধাজ্ঞা এলে তা রাজনৈতিক স্বার্থে’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম

‘শ্রম ইস্যুতে নয়, নিষেধাজ্ঞা এলে তা রাজনৈতিক স্বার্থে’

বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। এমনকি চীনের চেয়েও বেশি অধিকার পাচ্ছে এ দেশের শ্রমিকরা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনের ১০টির মধ্যে ৮টিই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন করেছে মাত্র ২টি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে, শ্রম অধিকারের কারণে নয়, এটি হতে পারে রাজনৈতিক বা তাদের অন্তর্নিহিত কোনো স্বার্থের কারণে। 

সোমবার রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অফিসে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, অর্থনীতিবিদ মোস্তফা আবিদ খান, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামিম এহসান, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন, শ্রমিক নেতা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান, ইআরএফের সভাপতি রিফায়েত উল্লাহ মীরধা এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

গত ২০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মন্ত্রী (বাণিজ্য) সেলিম রেজা ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম ইস্যুর অজুহাতে স্মারকলিপিতে বর্ণিত যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। 

ই স্মারকলিপি বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শ্রম অধিকারের অজুহাতে ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় এই সেমিনারের আয়োজন করে। 

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি এমন খারাপ অবস্থানে নেই, যে জন্য স্যাংশন দিতে হবে। এরপরও যদি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, সেটা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শ্রম অধিকারের কারণে নয়।’ 

তিনি বলেন আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞায় ভীত নই। কারণ যে সব কারণে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে আমরা এমন কিছুই করিনি। আইএলও কনভেনশনের ১০টির মধ্যে ৮টি পূরণ করেছি। বাংলাদেশ এমন অবস্থা নেই যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে। এরপরও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে হলে তা অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ববান শ্রমিক সংগঠন বা নেতা হলে তিনি কারখানার ক্ষতি করতে পারেন না। অনেক পক্ষ আছে যারা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়েও ভয় কাজ করে মালিকপক্ষের মধ্যে। ট্রেড ইউনিয়ন মানেই যখন তখন কাজ বন্ধ করে দেবে সে ধরনের ইউনিয়ন নিয়ে আমরা ভীত। 

তিনি আরও বলেন, এবারের আন্দোলন শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল না। তাহলে কারা ভাঙচুর করলো সেটা দেখতে হবে। তাদের যারা উৎসাহিত করল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ফুটেজ ছাড়া যাদের নামে মামলা হয়েছে আমরা তাদের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি।

অর্থনীতিবিদ মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের  মেমোরেন্ডাম অনুযায়ী, ট্রেড স্যাংশন আসার আশঙ্কা কম। কারণ ডব্লিউটিও’র (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) বিধান অনুযায়ী, এটি  দেওয়া সহজ নয়। কিংবা ট্যারিফ বাড়ানোরও সুযোগ কম।’ 

তিনি বলেন, ব্যক্তিভিত্তিক কোনো পেনাল্টি হয়তো দেওয়া হতে পারে। তিনি এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সক্রিয় ভ‚মিকা রাখার পরামর্শ দেন। মোস্তফা আবিদ খান আরও বলেন, শ্রম ইস্যু নিয়ে কারখানায় ভয় আছে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, কিন্তু তা অনেক সময় কী দেখি। ছাত্রনেতা যদি হয় দুই ছেলের বাবা, তাহলে তিনি কী করে ছাত্রের সমাধানে কাজ করবে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, তাহলেই তিনি শ্রমিকের সমস্যা বুঝবেন। 

বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামিম এহসান বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এটি রাজনৈতিক। ফলে তা কূটনৈতিক উপায়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। মালিকপক্ষ বা শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে (সমাধান) সম্ভব নয়। 

ফজলে শামিম এহসান আরও বলেন, শ্রম বিষয়ে বর্তমানে আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছি। আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকেও ভালো আছি। ক্ষতিপূরণের দিক থেকে আমরা উন্নত দেশের মতো অবস্থায় আছি। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মনে ভয় থাকে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সেভাবে নার্সিং করা হয়নি। 

তিনি বলেন, আমাদের ২ হাজার  ৫শ কারখানার মধ্যে ১৩০০-এর বেশি কারখানায় ইউনিয়ন হয়েছে। আমাদের সেক্টরে শ্রমিক নেতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। তাদের একটা সেক্টর বাঁচাতে কাজ করে, আর একটা আছে বাইরে থেকে ডলার এনে নিজের স্বার্থ দেখে। শ্রমিক নেতা মানে দাবিদাওয়া না, কারখানাকেও এগিয়ে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের যে আইনটার কারণে আমাদের ভয় সেখানে দুটি দিক আছে। একটা পর্দার সামনে অন্যটি পর্দার বাইরের দিক। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এখন যে পরিস্থিতি আছে সেটা রাজনৈতিক। তাই এখানে কূটনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারকে এখানে উদ্যোগ নিতে হবে।

আমিরুল হক আমিন, যারা স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দিতে চান তারা আইএলও কনভেশনের কয়টি রেটিফাই (অনুমোদন) করেছেন? তারা কোর কনভেনশনের বেশিরভাগই রেকটিফাই করেননি। তারা যদি বলে তোমার (বাংলাদেশের) শ্রমমান উন্নত নয়, তাহলে বলতে হবে, শ্রমমান নয়, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।’ 

তিনি বলেন, এতে ভীত হওয়ার কারণ নেই। সমস্যা আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করব। তবে ভিন্নমত পোষণ করেন শ্রমিক নেতা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক স্মারকলিপিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ এটা বৈশ্বিক বিজনেস।’ 

তৌহিদুর রহমান আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয় পশ্চিম আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। সাম্প্রতিক আন্দোলনে চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হলো। এ হত্যাকাণ্ডের কেন তদন্ত হলো না, কেন বিচার হচ্ছে না। 

অন্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায়নি, যেজন্য যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। বরং নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা হতে পারে রাজনৈতিক কারণে। 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম