নিয়ন্ত্রণের বাইরে হুন্ডি টাকা পাচারকারীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম
প্রতীকী ছবি
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিনিময় হার হুন্ডির পর্যায়ে নিয়ে গেলেও লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন-অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। এভাবে হুন্ডি ও টাকা পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে কয়েকটি ব্যাংকের এমডি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এবিবি চেয়ারম্যান। তবে বৈঠকে ডলারের বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বৈঠকে কয়েকজন এমডি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে মরক্কো গিয়েছিলেন এবং সে বিষয়ে ধারণা দিতেই বৈঠকটি হয়েছে বলে জানান ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি।
আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে এবং সংস্থাটির ঋণের শর্তাবলি কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। দেশের কয়েকটি ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গেও আইএমএফ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা গভর্নরকে অবহিত করেন।
সভা শেষে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ডলারের বিনিময় হার ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলে দেখা যাবে, হুন্ডিওয়ালারা ১৪০ টাকা দেবে। বিষয়টা হলো যারা বিদেশে টাকা পাচার করেন, তাদের কাছে বিনিময় হার কোনো বিষয় নয়, যেকোনো মূল্যে তারা তা করবেন। এসব তো কালোটাকা, পাচারকারীরা যে কোনো মূল্যে ডলার কিনে টাকা পাচার করবেন।
এ ছাড়া কার্ব মার্কেটের প্রসঙ্গে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, এই বাজারে বছরে তিন থেকে চার কোটি ডলার লেনদেন হয়। দেশের অর্থনীতির যে আকার, তার সাপেক্ষে এটি খুবই সামান্য। ফলে কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময় হার কত বা তাকে মানদণ্ড হিসাবে দেখানোর প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন।
সেলিম আর এফ হোসেন আরও বলেন, রপ্তানি আয়ের যে অংশ দেশের বাইরে থেকে যাচ্ছে, সেগুলো দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন গভর্নর।
জানা গেছে, ডলার মার্কেটে অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক ঋণের সুদ হার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে এবিবির সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে নীতিগত যে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়। যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে সে পরিমাণ ডলার দেশে আসছে না। বরং পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করি আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে এবং একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
দেশের ডলার সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেকেই রপ্তানি মূল্য দেশে আনছেন না। বরং বিদেশি ক্রেতাদেরকে পণ্যমূল্য পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে দেশ থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ বাবদ ডলার চলে গেলেও রপ্তানির বিপরীতে তুলনামূলক ডলার কম আসছে। তৈরি হচ্ছে ঘাটতি। এ বিষয়গুলো নজরে এনেছি এবং তা সমাধানের চেষ্টা করছি।
মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এসেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এখানে নয় বিলিয়ন ডলারের একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, অত্যধিক মূল্যে ডলার কেনার জন্য ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তাকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আইন অনুযায়ী, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। ভবিষ্যতে যদি কোনো ব্যাংক আইনের ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে তাদেরকেও জরিমানা করা হবে। হুন্ডি বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। ৫০টিরও বেশি অনলাইন সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব কার্যক্রম চলমান।
বৈঠক শেষে এবিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, বৈঠকে মূলত দুটি বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সিআইবি। এটা নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির কিছু কৌশল হাতে নিয়েছি। আশা করি দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয়টি হলো ঋণের সুদ হার। কারণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে আস্তে আস্তে ঋণের সুদ হার বৃদ্ধির কারণে পণ্যের ওপর একটি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এটি স্বাভাবিক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের একান্ত সিদ্ধান্ত। ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদ হারও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে, তবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।