Logo
Logo
×

অর্থনীতি

এবার অভিনব কৌশলে অর্থ পাচার হচ্ছে

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম 

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:১৬ পিএম

এবার অভিনব কৌশলে অর্থ পাচার হচ্ছে

পণ্য রপ্তানির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচার চলছেই। আর এ অপকর্ম করতে গিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিত্যনতুন কৌশল। আগে ইএক্সপি (রপ্তানি অনুমতিপত্র) জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করা হতো। চলতি বছরের মার্চে রপ্তানি অনুমতিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে চারটি প্রতিষ্ঠানের ৩৮৪ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উদঘাটন করে শুল্ক গোয়েন্দারা। এরপরও থামেনি পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার। 

রোববার শুল্ক গোয়েন্দারা প্রকাশ করেছে তৈরি পোশাক রপ্তানির নামে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৪৭ কোটি টাকা পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

এবার পণ্যের মূল্য অবিশ্বাস্য কম দেখিয়ে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করা হয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পোশাক রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এতে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ে পাঠানো ৪২৪টি রপ্তানি চালান তদন্ত করে অর্থ পাচারের সত্যতা পাওয়া যায়। রপ্তানি চালান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ইস্যু করা রপ্তানি অনুমতিপত্র ঠিক থাকলেও অতি নিুমূল্যে ৫ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন রেডিমেড গার্মেন্টস (টি-শার্ট) সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্য চালানগুলো রপ্তানির মাধ্যমে ১৪৭ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে কাস্টমস গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী পৃথক মামলা করা হবে। ১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টি ঢাকার এবং ২টি চট্টগ্রামের।

এ বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. বশীর আহমেদ জানান, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যাংকের রপ্তানি অনুমতিপত্র ইস্যুর সময় বা রপ্তানি চালান শুল্কায়নের সময় মূল্যের বিষয়টি নজরদারি প্রয়োজন। 

তিনি যুগান্তরকে বলেন, ১৯ প্রতিষ্ঠানের টাকা পাচারের যে তথ্য আমরা উদঘাটন করেছি, এক্ষেত্রে আগের কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থাৎ রপ্তানি অনুমতিপত্র ঠিক থাকলেও পণ্যের মূল্য অনেক কম দেখানো হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যের রপ্তানি মূল্যের ৮-১০ গুণ কমও দেখানো হয়েছে। এতে পণ্য রপ্তানি হয়ে গেলেও তার প্রকৃত মূল্য দেশে আসেনি।

এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচার বন্ধ করতে হলে যে ব্যাংক রপ্তানি অনুমতিপত্র ইস্যু করে সেই ব্যাংককে পণ্যমূল্য যাচাই করে দেখতে হবে। রপ্তানি অনুমতিপত্র ইস্যুর দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সব ব্যাংকে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠান আইডি দিয়ে রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য দেয়। ব্যাংকের লোক সেটাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে আপলোড করে। আপলোডের সময় ওই লোকের যদি কোনো দায়িত্ব না থাকে, তাহলে তাকে রাখার দরকার কী। প্রতিষ্ঠান নিজেই তো আপলোড করে দিতে পারে। একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেক করে দেখার জন্য। পণ্যের সঙ্গে ডলারের সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটা অবশ্যই চেক করতে হবে। পণ্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাবে, এর বিপরীতে টাকাটা এলো কিনা। টাকা না এলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা কঠোরভাবে দেখে। কিন্তু কত টাকা এলো, পণ্যের প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী টাকা এলো কিনা এগুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

এক্ষেত্রে কাস্টমসেরও দায়িত্ব রয়েছে জানিয়ে বশীর আহমেদ বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু একজন কর্মকর্তাকে যদি ১০০টি চালান চেক করে দেখতে হয়, তাহলে তিনি কয়টি পারবেন। তিনিও তো একজন মানুষ। তাই বেছে বেছে কিছু প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ভালো করে দেখার জন্য আমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে রপ্তানি অনুমতি জালিয়াতির মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের বিষয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের একই কাজে জড়িত থাকার তথ্য পায় শুল্ক গোয়েন্দারা। পরে মার্চে প্রতিষ্ঠান চারটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখনো অর্থ পাচারের মামলা করতে পারেনি কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচারের মামলার প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। এ ধরনের মামলা করতে হলে এনবিআরের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি পাওয়ার পর নিয়োগ করতে হয় তদন্ত কর্মকর্তা। পুরো বিষয়টি আবারও তদন্ত করে তবেই মামলা করতে হয়।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. বশীর আহমেদ বলেন, আগের চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শিগগিরই মামলা হবে। বন্দর থানায় করা চারটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে শুনানি চলছে। তবে নতুন যে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে তারা কাগজপত্র জালিয়াতি না করায় ফৌজদারি মামলা হবে না। এক্ষেত্রে শুধু অর্থ পাচার মামলা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম