ঋণের সুদ বাড়াতে চাপ
শেয়ারবাজারে বড় দরপতন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪১ এএম
শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৫৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এতে মূল্যসূচক কমেছে ৯৪ পয়েন্ট। এর ফলে একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া কমেছে লেনদেনও। মঙ্গলবার ডিএসইতে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে যা ৪৬০ কোটি টাকা কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাজারের এই দরপতন পরিকল্পিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাম্প্রতিক সময়ে মার্জিন ঋণের সুদ কমিয়ে দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়েছে একটি মহল। এরপর থেকেই বাজার পতনের মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে ঋণের সুদ বাড়াতে চায় গ্রুপটি। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করলে তা বাজারের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হবে। কারণ মার্জিন ঋণের সুদের হার কমানো অত্যন্ত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণের সুদ হার বেধে দেয় বিএসইসি। এক্ষেত্রে মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হবে ১২ শতাংশ। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়ে থাকেন, সেটি মার্জিন ঋণ হিসেবে পরিচিত। সাধারণত ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার এনে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্জিন ঋণ হিসেবে বিতরণ করে থাকে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যে সুদে টাকা ধার নেবে, তার সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ বাড়তি সুদ যোগ করতে পারবে মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে। তবে মার্জিন ঋণের এ সুদহার কোনোভাবেই ১২ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এর ফলে ঋণ নিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী বাজারে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের মাঝে স্বস্তি আসে। অর্থনীতিবিদরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়। গত এপ্রিলে ব্যাংক ঋণের সুদহার একক অঙ্কে নামিয়ে আনার পর থেকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণের সুদহার কমানোর দাবি করে আসছিলেন। শেয়ারবাজারে বর্তমানে মার্জিন ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশের মধ্যে। ছুটির দিনে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকলেও এ সুদ গণনা হয়। ফলে মার্জিন ঋণের সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। এদিকে মার্জিন কমানোর পরই পরিকল্পিতভাবে বাজারে পতনের চেষ্টা করে একটি মহল। এখনও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে।
একক দিন হিসাবে ডিএসইতে মঙ্গলবার ৩৫৭টি কো¤পানির ২৮ কোটি ২৮ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ১ হাজার ১২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২৫৫টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৯৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে নেমেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৩৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৬৩ পয়েন্ট নেমে এসেছে। ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি: মঙ্গলবার ডিএসইতে যেসব কোম্পানির শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, রবি অজিয়াটা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, সামিট পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ এবং আইএফআইসি ব্যাংক।
মঙ্গলবার ডিএসইতে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো- ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, ডেফোডিল কম্পিউটার, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ব্যাংক, অগ্নী সিস্টেম, এসএস স্টিল এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো- এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, শাইনপুকুর সিরামিকস, বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি অজিয়াটা, মাইডাস ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, শ্যামপুর সুগার, ডোমিনেজ স্টিল, আমান ফিড এবং এআইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।