মিরপুরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ
দুই গাড়িতে আগুন : গুলিবিদ্ধ ২
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর মিরপুরে বৃহস্পতিবার পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর (সেনাবাহিনী ও পুলিশ) সংঘর্ষে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধরা হলেন-আমিন হোসেন (১৭) ও ঝুমা আক্তার (১৫)। মিরপুর ১৪ নম্বরে সেন্টেক্স ফ্যাশনস লিমিটেডের এই দুই কর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আল আমিনের দুই কাঁধে ও ঝুমার ডান পায়ের গোড়ালিতে গুলি লেগেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ বলেছে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তৈরি পোশাক কারখানার কয়েকশ শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেত সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করেন। এক পর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।
সংঘর্ষ মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিরপুর ১৪ নম্বর সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ পোশাক শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সেনাবাহিনীর একটি ও পুলিশের অপর একটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশ একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি চালায়। এতে দুই পোশাক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কচুক্ষেত এলাকায় মৌসুমি অ্যান্ড ভুঁইয়া নামে একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, তিন দিন আগে ওই ভবনের একটি পোশাক কারখানায় এক নারী পোশাক শ্রমিককে মারধর করা হয়।
এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে একজন পুরুষ শ্রমিককেও মারধর করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা ওই কারখানায় গেলে কারখানা বন্ধ দেখেন। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ও কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে শ্রমিকরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যান চলাচল শুরু হয়। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে এ নিয়ে তদন্ত করা হবে।
সেনাবাহিনী-পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই- জামায়াত আমির : মিরপুরে বিক্ষোভকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনা যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে হয়ে থাকে, দেশ এবং অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার কোনো ছক থেকে থাকে, তাহলে বিষয়টি হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার সকালে কচুক্ষেত এলাকায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়।
একপর্যায়ে দুই পোশাক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন; বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পৃথক দুটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। বিকাল তিনটার দিকে এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে ‘রাজধানীর কচুক্ষেতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন!!’ শিরোনামে দলের আমির শফিকুর রহমান একটি স্ট্যাটাস দেন।
শফিকুর রহমান লিখেছেন, ‘খুব নিকট সময়ের ভেতরেই গোপালগঞ্জের পর ঢাকার কচুক্ষেতে এই ঘটনা ঘটল। শ্রমিকদের যদি কোনো ন্যায্য দাবি-দাওয়া থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাধান করবে-এটাই তাদের কর্তব্য। কিন্তু বিক্ষোভকালে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, এটা যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে হয়ে থাকে, দেশ এবং অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার কোনো ছক থেকে থাকে, তাহলে বিষয়টি হালকাভাবে দেখার কোনোই সুযোগ নেই।’