অচলাবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত, পুনর্গঠনে পরিকল্পনা চান গভর্নর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
ফাইল ছবি
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে দুরবস্থায় এখন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ ফেরত পাচ্ছে না, তাই বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ছে।এতে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মূলধন সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।ওই বৈঠকে এই বার্তা দিয়েছেন গভর্নর।বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সংকটে রয়েছে। এ সংকট নিরসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নানা সুযোগ-সুবিধা চায় তারা। ব্যাংকের মতো অবলোপন বা রাইট অফ সুবিধা চায়। আবার প্রভিশনের একটা অংশ মুনাফায় নিতে চায়। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধেও সময় বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। তবে গভর্নর পুরো খাত সংস্কারে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে বলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো নিয়ে তারা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকের মতো সুযোগ-সুবিধা চায়। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ টানা ২ বছরে আদায় করতে না পারলে অবলোপন বা রাইট-অফ করতে পারে ব্যাংক খাত। এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ২ বছরে অবলোপন করার সুবিধা চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকবহিভর্‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড ২৩ হাজার ২০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৫৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিতরণ করা ঋণের ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
এইদিকে সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই ৩ মাসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সাড়ে ৪৮ হাজারের বেশি ব্যক্তি আমানতকারী। যদিও একই সময়ে এক হাজারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী বেড়েছে খাতটিতে। ফলে সার্বিকভাবে ৩ মাসে আমানতকারী কমেছে সাড়ে ৪৭ হাজারের মতো। আর গত এক বছরের ব্যবধানে কমার এই অঙ্ক ৮৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারল্য সংকটে। অবস্থা এমন পর্যায়ে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্তত ১৫-১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন নাজুক।
আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, পুরো খাতই এখন তার জের টানছে। পিকে হালদারের মালিকানা আছে বা ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যে কারণে সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।