Logo
Logo
×

অন্যান্য

এসির বাজারে দেশীয় পণ্যের আধিপত্য

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম

এসির বাজারে দেশীয় পণ্যের আধিপত্য

বছরের অধিকাংশ সময় গরম ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে এয়ার কন্ডিশনই (এসি) একমাত্র ভরসা। তাই একসময় যে এসি ছিল শহুরে উচ্চবিত্তদের বিলাসিতার প্রতীক বা বিলাসী জীবনের অনুষঙ্গ; আবহাওয়া বদল ও দেশীয় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদকদের কল্যাণে দাম সাধ্যের নাগালে আসায় সে এসি এখন মধ্যবিত্তের যাপিত জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। 

তথ্য বলছে, দুই যুগ আগেও এসির বাজার ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। শুরুতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে বিদেশি ব্র্যান্ডের এসি আমদানি করা হতো। পরবর্তী সময়ে দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় চীন থেকে ফ্রিজ-এসি আমদানি শুরু হয়। ২০০০ সাল পর্যন্ত চীনা ব্রান্ডের ফ্রিজ-এসি বাজারে রাজত্ব করে। অবস্থা বদলাতে থাকে ২০০০ সালের দিকে। আমদানিকারকদের অনেকেই চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ এনে দেশে সংযোজন শিল্প স্থাপন করেন। শুরুটা ছিল রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ সংযোজন দিয়ে। পরবর্তী সময়ে এসি, এলইডি টিভি সংযোজন শুরু হয়। সরকার এ সময় নীতিসহায়তা দেওয়ায় দেশে ইলেকট্রনিক্স শিল্প বিকাশ লাভ করে। দেশেই শুরু হয় এসি-ফ্রিজ উৎপাদন। এখন দেশে এসি-ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যমুনা ইলেকট্রনিক্স, ইলেক্ট্রো মার্ট, ওয়ালটন, ট্রান্সকম, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স, এসকোয়্যার ইলেকট্রনিক্স, মিনিস্টার, ভিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এসির বাজারে দেশীয় পণ্যের আধিপত্যই বেশি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যস্ততার কারণে দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজার বড় হচ্ছে। প্রতিবছর গরমে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, তাতে এসি এখন আর বিলাসিতার পর্যায়ে নেই, বরং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে। দেশীয় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে দাম হাতের নাগালে চলে আসায় সাধ্য অনুযায়ী এসি কেনায় ঝুঁকছে সবাই। এসির বাজার যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনই তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। জেলা শহরের পাশাপাশি এখন অনেক উপজেলায়ও এসির বেচাকেনা জমজমাট, যা এসির বাজার বড় করতে বড় ভ‚মিকা রাখছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ৩-১২ মাসের ইএমআইতে (মাসিক কিস্তি) প্রায় সব ব্র্যান্ড এসি বিক্রি করছে। অনেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান আবার সুদমুক্ত কিস্তিতে এসি বিক্রি করছে, যাতে সাধারণ মানুষ এসি কিনতে পারেন। মানে ভালো, দামে সস্তা হওয়ায় বর্তমানে এসির বাজার অনেকটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের দখলে। চাহিদার বেশির ভাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জোগান দিচ্ছে। 

প্রতিবছর গরমে কী পরিমাণ এসি বিক্রি হয়, এর সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে নেই। তবে বাজার তথ্যের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা জার্মান ওয়েব পোর্টাল স্ট্যাটিস্টার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এসি বিক্রির পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে। তখন থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে এসির বাজার। করোনা মহামারিতে বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়ে। লকডাউনে অফিস-আদালত ও রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় এসির চাহিদা কমে যায়। গত ২-৩ বছরে গ্রীষ্মকালে গরম বাড়তে থাকায় এসি বিক্রিও বাড়তে থাকে। 

বাজারে এখন দুই ধরনের এসি পাওয়া যায়। ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার। এর মধ্যে ইনভার্টারের দাম কিছুটা বেশি। কারণ, এ ধরনের এসিতে বিদ্যুৎ খরচ কম। পাশাপাশি এসিতে আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। যেমন : ঘরের বাতাস জীবাণুমুক্ত রাখা, ভয়েস কন্ট্রোল, স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসি পরিষ্কার হওয়া ইত্যাদি। এছাড়া সাশ্রয়ী দামে আরও নানা সুবিধার এসি বাজারে ছাড়ছে দেশি কোম্পানিগুলো। 

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখে এসির বিভিন্ন সাইজ, রং, ক্ষমতা ও মূল্য নির্ধারণ করে। 

যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশের সেরা ব্র্যান্ড যমুনা ইলেকট্রনিক্স। সাশ্রয়ী দামে সর্বোচ্চমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। বর্তমানে তীব্র দাবদাহের কারণে এসির চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। গরম থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই ঝুঁকছেন এই ইলেকট্রনিক্স পণ্যটির দিকে। বর্তমানে এসির বাজারে দেশীয় কোম্পানিগুলো আধিপত্য বিস্তার করে আছে। এগুলোর মধ্যে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অন্যতম। নিত্যনতুন চাহিদা ও ক্রেতা সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অবিরত কাজ করছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই- পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আমরা যেসব কাঁচামাল, উদ্ভাবন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করি, সেটি দেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। 

মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সামসুদ্দোহা শিমুল বলেন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে বর্তমানে বড় বাধা ডলার সংকট। সে কারণে কাঁচামাল আমদানিতে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে সরকার এ সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। 

ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফছার বলেন, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও ডলারের দাম সমন্বয়ের কারণে দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতে কাঁচামাল ও অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে সঙ্গে ব্যাংকগুলোর এলসি প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় যথাসময়ে কাঁচামাল নিশ্চিত করে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বারবার বিঘ্ন হচ্ছে। তবে বাজার চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হচ্ছে। 

ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের চিফ বিজনেস অফিসার তানভীর বলেন, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি তেলসহ বেসিক কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইলেকট্রনিক্স শিল্পের প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়। যার কারণে গত বছর এ খাতে সামগ্রিক ব্যবসা প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পায়। তবে এ বছর শিল্পটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, বর্তমানে ৮০ শতাংশেরও বেশি বাজার দেশি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির দখলে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে বলে আশাবাদী।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম