
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
অ্যালার্জি থেকে মুক্তির কার্যকর উপায় বাতলে দিলেন ডা. তাসনিম জারা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
রাতে মহল্লায় যেমন পাহারাদার টহল দিতে থাকে, ঠিক তেমনই আমাদের শরীরেও তেমন অনেকগুলো পাহারাদার দিনে-রাতে টহল দেয় ক্ষতিকর জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে।
আমরা যে প্রতিদিন অপরিষ্কার কত কিছু খাই, বাতাসে ভেসে বেড়ানো কত জীবাণু শরীরে ঢোকে তাও আমরা অসুস্থ হই না। এই পাহারাদারদের কল্যাণে। ক্ষতিকর জিনিসগুলোকে ধরাও পাকড়াও করে একদম নিশ্চিহ্ন করে দেয়, কিন্তু আমরা টের পাই না। এটাই হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে এটা সবসময় নিখুঁতভাবে কাজ করে না, মাঝে মাঝে ভুলও করে বসে। তখনই দেখা দেয় অ্যালার্জি।
বিরক্তিকর এই অ্যালার্জির সমস্যার কার্যকরী কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. তাসনিম জারা। চলুন জেনে নিই সে সম্পর্কে—
অ্যালার্জি থেকে বাঁচার উপায় কী
অ্যালার্জি চিকিৎসা মোটাদাগে দুই ধরনের। প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অ্যালার্জি হতেই না দেওয়া। আপনার শরীর যাকে শত্রু মনে করে তাকে কাছে ঘেঁষতে না দেওয়া। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল যখন অ্যালার্জি দেখা দেয়, সেই অস্বস্তিগুলো কমানোর জন্য চিকিৎসা।
প্রথম উপায়
যেই জিনিসে আপনার অ্যালার্জি, সেটা আপনি আপনার কাছে আসতে দেবেন না। তাহলে আপনার শরীরের পাহারাদারগুলো অযথা মারামারি করার জন্য আর কাউকে পাবে না।তবে ঠিক কিসে আপনার অ্যালার্জি সেটা খুঁজে বের করতে আপনাকে একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হতে পারে। খাবারে অ্যালার্জি হলে সেটা খুঁজে বের করা তুলনামুলকভাবে সহজ।কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা খাবারের মত খুঁজে পাওয়া এতটা সহজ না। এমন জিনিসগুলোর একটা তালিকা আমি এখানে বলে দিচ্ছি।
১. ডাস্ট মাইট
ডাস্ট মাইট হলো ছোট ছোট পোকা, চোখে দেখা যায় না। মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখলে সাদা রঙের আট পা ওয়ালা পোকার মত দেখা যায়। আমাদের চামড়া থেকে যে মৃত কোষগুলো ঝরে পরে, এরা সেগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে।
আমাদের চামড়া থেকে তো প্রতিদিনই অল্প অল্প মৃত কোষ ঝরে পরছে বিছানায়, কার্পেটে, সোফায় আর এসব জায়গায় বাসা বাধছে কোটি কোটি ডাস্ট মাইট। এই ডাস্ট মাইটে আপনার অ্যালার্জি হতে পারে। এটা অ্যালার্জির খুবই কমন একটা কারণ। কিন্তু একে চোখে দেখা না যাওয়ার কারণে ধরতে পারা কঠিন।
এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য বালিশ, কাঁথা, লেপের কভার সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। যেসব জিনিস নিয়মিত ধোঁয়া যায় না, যেমন- কার্পেট। এসব জিনিস বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো।
২. মোল্ড বা ছত্রাক
বাসা স্যাঁতসেঁতে থাকলে ছত্রাক হতে পারে। ছত্রাক থেকে ছোট ছোট কণা নিঃসরণ হয়, সেটাতে আপনার অ্যালার্জি হতে পারে। ছত্রাক যাতে না হয়, সেজন্য ঘরে বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা করবেন। ঘরের ভেতরে কাপড় শুকাবেন না। আর ঘরের ভেতরে গাছ থাকলে সরিয়ে ফেলবেন।
৩. পরাগ রেণু
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে ভেসে বেড়ানো পরাগ রেণুর ধরণ বদলায়, সংখ্যা বাড়ে কমে। আর সেই সঙ্গে আপনার অ্যালার্জির তীব্রতাও বাড়তে করতে পারে। বছরের একটা সময় দেখা যায় অনেকের চোখ-নাক চুলকানো শুরু করে, নাক-চোখ দিয়ে পানি পরে। সর্দি থাকে বা নাক বন্ধ হয়ে যায়, চোখ লাল হয়ে যায়- এমন হলে পরাগ রেণু আপনার শত্রু হতে পারে। খেয়াল রাখবেন বছরের ঠিক কোন সময়টাতে আপনার এমন হচ্ছে। সে সময় ঘরের ভেতর থাকা যায়। আর বাহিরে গেলেও ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টে গোসল করে ফেলবেন।
৪. গরম বা ঘাম
ঘামে যে উপাদানগুলো আছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আপনার শরীর রিয়্যাক্ট করতে পারে। অনেক খাটাখাটনি করলে, পরিশ্রম করলে, ব্যায়াম করলে যখন শরীর ঘাম হচ্ছে তখন গায়ে চুলকানি হতে পারে। এর জন্য চেষ্টা করা বাতাস আছে এমন জায়গা থাকা, পাতলা ঢিলেঢালা জামা পরা।
৫. ঠান্ডা
গরমের মত বেশি ঠাণ্ডায় গেলেও অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও হতে পারে পশুপাখির লোম বা পালক যা বাতাসে ভাসতে পারে কিন্তু চোখে দেখায় যায় না। পথেঘাটে ধূলাবালি, পোকার কামড়ে হবে পারে। আবার নির্দিষ্ট ধরনের কাপড়, প্লাস্টিক, ওষুধ, নির্দিষ্ট কেমিক্যাল যা সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, পারফিউম ইত্যাদিতে থাকতে পারে।
দ্বিতীয় উপায় (অ্যালার্জি হয়ে গেছে এখন আপনি কী করবেন)
১. অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের প্রধান ওষুধ হল অ্যান্টিহিস্টামিন। এ জাতীয় অনেক ওষুধ আছে যা অ্যালার্জির যাবতীয় অস্বস্তিগুলো কমাতে সাহায্য করে। আবার যখন আগে থেকে জানা যে অ্যালার্জি হতে পারে, তখন আগে ভাগে খেয়ে নিলে অ্যালার্জি হওয়া রুখে দিতে পারে।
২. চুলকানি কমানোর জন্য জায়গাটাতে একটু ঠান্ডা সেক দিতে পারেন।একটা তোয়ালেতে বরফ পেঁচিয়ে সেক দিতে পারেন।
৩. চুলকানি কমাতে কালামাইন লোশন, ১% মেন্থল ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজিং লোশনও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. আপনার খুব তীব্র অ্যালার্জি হলে স্টেরয়েড নামের ওষুধ খেতে হতে পারে। তবে এটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
৫. অ্যালার্জির চিকিৎসার পরের ধাপের চিকিৎসা হচ্ছে ইমিউনোথেরাপি। অনেকে এটাকে অ্যালার্জি ভ্যাক্সিন বলেন। যেই জিনিসে আপনার অ্যালার্জি সেটাতে অল্প অল্প করে ইনজেকশন দিতে হয় কয়েক বছর ধরে।