গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির সহজ উপায় বলে দিলেন ডা. তাসনিম জারা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
কোনো কিছু খেতে পারি না, খেলেই বুক জ্বালাপোড়া করে, অ্যাসিডিটি হয়- এই সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষ বর্তমানে খুঁজে পাওয়া কঠিনই হবে। আমাদের অনেকেরই খাবার পরে বুকের মাঝখান থেকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এই রোগটাকে আমরা অনেক ধরনের নাম দেই। যেমন- গ্যাস্ট্রিক, আলসার, অ্যাসিডিটি হার্টবার্ণ, অ্যাসিড, রিফ্লাক্স ইত্যাদি। তবে ডাক্তারি ভাষায় এই রোগটির নাম ‘গ্যাস্ট্রোইডোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে ধীরে ধীরে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে অনেকেই বদহজম, অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যায় ভোগেন।
আমাদের দেশের অতি পরিচিত এ সমস্যাটির ঘরোয়া উপায়ে সমাধানের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. তাসনিম জারা। একই সঙ্গে তিনি এই সমস্যার কেন হয়, তারও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। চলুন জেনে নিই সে সম্পর্কে—
কেন এই সমস্যাটি হয়?
এ বিষয়ে ডা. তাসনিম জারা বলেন, আমরা যখন কিছু খাই, সে খাবারগুলো পাকস্থলীতে যায়। আর পাকস্থলী কিছু অ্যাসিড এবং আরো কিছু জিনিস তৈরি করে সেই খাবারগুলো হজম করার জন্য। অ্যাসিড আর খাবার দুটোই পাকস্থলী থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে। তবে যদি অ্যাসিড নিচের দিকে না নেমে গলার দিকে উঠে আসে, তখন আমরা বুকে জ্বালাপোড়া অনুভব করি।
তাহলে পাকস্থলীর অ্যাসিড কেন উপরের দিকে উঠে আসে, নীচে না নেমে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বেশ কিছু কারণের বিষয়ে উল্লেখ করেন। যেমন-
১. কোনো কারণ ছাড়াই এমন হতে পারে। আবার কিছু কিছু জিনিস এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন- নির্দিষ্ট কিছু খাবার। কারো কারো বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে জ্বালাপোড়া শুরু হয়, আবার কারও কফি খেলে অসুবিধা শুরু হয়, একেক জনের একেক রকম হতে পারে।
২. আবার যারা ধূমপান করেন তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। যদি অনেক টেনশনে থাকেন, সেখান থেকে হতে পারে।
৩. আপনার ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন এই সমস্যা বেশি হতে পারে।
৪. যারা গর্ভবতী তারা প্রায়ই এ সমস্যায় ভোগেন।
৫. যাদের ‘হায়াটাস হার্নিয়’ নামের একটি রোগ আছে। এ রোগটির কারণে পাকস্থলীর কিছু অংশ বুকের উপর চলে আসে। যার ফলে এ সমস্যাটি হতে পারে।
৭. আর নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ আছে যেগুলো এই সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন ইত্যাদি। আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শে এই ওষুধগুলো খান তাহলে কোনোভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধগুলো বন্ধ করবেন না। আপনি ডাক্তারকে জানান যে ওষুধ শুরু করার পরে মেন হচ্ছে জ্বালাপোড়ার সমস্যাটা বেড়ে গেছে। তখন ডাক্তারই আপনাকে পরামর্শ দেবে।
বিরক্তিকর এ সমস্যা ঘরোয়া উপায়ে সমাধানে ৭টি পরামর্শ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন ডা. তাসনিম জারা। নিচে তার পরামর্শগুলো তুলে ধরা হলো।
১. একবারে পেট ভরে খেলে এই সমস্যা বেশি হয়
খাবার খাওয়ার সময় একবারে বেশি খাবেন না। সারাদিনে ভাগ ভাগ করে অল্প অল্প খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা, বেশি খেলে পাকস্থলীটা ভরে উঠে। আর তখন পাকস্থলীর ভেতরে অ্যাসিড উপরের দিকে উগরে আসতে পারে। আর তখনই শুরু হতে পারে বুকে জ্বালাপোড়া।
২. খাবারের সময় নিয়ে অনিয়ম না করা
সময়মতো খাবার না খেলে পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রাইটিস নামের আরেকটি রোগের সম্ভবনা বেড়ে যায়। এই রোগে পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত দেখা দেয়, ইনফেকশন হতে পারে। আর এই রোগ হলেও আপনার পেটে জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা হতে পারে।
৩. আপনার যে-সব খাবারে সমস্যা হয় সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. রাতে খাবারটা আগে আগেই সেরে ফেলতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলতে হবে।
৫. ঘুমানো বা বিছানায় শোয়ার সময় মাথা আর বুক ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখবেন কোমরের চেয়ে। সেটা পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরে ওঠা থামাবে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে- বালিশ দিয়ে যেন উঁচু না করি। কেননা, এতে শুধু আপনার মাথাটাই উঁচু হয়। বরং তোষকের বা খাটের নিচে কিছু দিয়ে খাটের একটা দিক উঁচু করে নিবেন এবং সেই দিকে মাথা দিবেন। যাদের রাতে বেলায় বুকে জ্বালাপোড়া খুব বেশি হয় তাদের জন্য এই পদ্ধতিটা খুবই কার্যকর।
৬. ওজন বেশি হলে সেটা কমানোর চেষ্টা করুন
অতিরিক্ত ওজন অনেক ধরেন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ইত্যাদি অনেক কিছুই এই অতিরিক্ত ওজরেন সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আপনার বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা সমাধানেও এটা অনেক সাহায্য করবে।
৭. ধূমপান বন্ধ করতে হবে
গবেষণায় দেখা গেছে যারা ধূমপান কমিয়ে ফেলে বা বন্ধ করে দেয়, তাদের এই সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়।