রাতে ঘুম আসছে না? জেনে নিন সহজ পদ্ধতি

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম

রাতে বিছানায় গেলেও ঘুম নেই। এপাশ-ওপাশ করছেন, কিন্তু ঘুম আসছে না? মাঝ রাতে চট করে ঘুম ভেঙে গেল, এরপর আর চোখের পাতা এক হচ্ছে না— নানা সমস্যার বড় সমস্যা হচ্ছে— ঘুম আসছে না। এবার ঘুম না এলে কী করবেন জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিদ্রাহীনতা বা অনিদ্রা এমন এক সমস্যা, যে সমস্যায় অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় ভুগেছেন কিংবা এখনো ভুগে চলেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা কারও কারও জন্য প্রবল সমস্যা হিসেবেও আবির্ভূত হয়। আর মানুষ কেন অনিদ্রায় ভোগে––এর পেছনে বেশ কিছু কারণও থাকে।
বার্ধক্যের প্রভাব। রাতে বারবার প্রস্রাব, মেনোপজ কিংবা রাতের পালার কাজ––এ রকম নানা বিষয় অনিদ্রা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব সমস্যার ক্ষেত্রে কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, সেটিও জেনে রাখা উচিত।
সম্প্রতি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। আর বিশেষজ্ঞরা ঘুম না এলে নিজেরা কী করেন, সে তথ্য তুলে ধরেছেন।
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফেইথ অর্চার্ড বলেছেন, আমি ঘুমাতে পারছি না। এর খুব স্বাভাবিক কারণ হতে পারে— আমার মস্তিস্ক কোনো কারণে বিরক্ত হয়ে আছে অথবা আমি খুব দুশ্চিন্তা করছি। এ রকম হলে আমি একটি বই নিয়ে পড়তে শুরু করি এবং একটু হালকা অনুভব করার আগ পর্যন্ত পড়তে থাকি।
ড. অর্চার্ড আরও বলেন, ঘুম না আসা প্রাথমিক উপসর্গ। কিন্তু বাস্তবে আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। মাঝরাত পর্যন্ত জেগে থাকা, একবার ঘুম ভাঙলে আর ঘুম না আসা, ভোর পর্যন্ত জেগে থাকার পর আর ঘুম না আসা— অনেকের জন্য অনিদ্রা হিসেবে বিবেচিত।
তিনি বলেন, যে হরমোনের কারণে ঘুম সৃষ্টি হয় এবং সারা দিনের কর্মযজ্ঞের ফলে শরীরে যে চাপের তৈরি হয়–– এই দুটি প্রক্রিয়ারই পাশাপাশি চলা উচিত। এর মধ্যে কোনো একটার ব্যতিক্রম ঘটলে সমস্যা হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দিনের বেলায় বা বিকালে একদফা ঘুমিয়ে নিলে রাতের বেলায় ঘুম আসা কঠিনও হতে পারে।
লন্ডনের রয়াল ব্রম্পটন হাসপাতালের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ব্রিটিশ স্লিপ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. অ্যালি হায়ার বলেছেন, আমি যখনই অনিদ্রায় ভুগি, এর প্রধান কারণ হয় আমার স্বামী বিছানায় বারবার পাশ ফিরছে কিংবা জোরে জোরে নাক ডাকছে। তাই আমি 'স্লিপ ডিভোর্স' পদ্ধতি বেছে নিই এবং অন্য একটি ঘরে ঘুমাতে চলে যাই।
ড. হেয়ারের মতে, অনিদ্রার লক্ষণগুলো খুবই সাধারণ এবং ৫০ শতাংশ মানুষের জন্য তা একই রকম। সপ্তাহে যদি তিন রাত ঘুমানোর ক্ষেত্রে কারও সমস্যা হয় এবং তিন মাসের বেশি সময় ধরে এটা চলে, আর রাতে ঘুম না আসার কারণে দিনের কাজে প্রভাব পড়লে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কলিন ইসপি বলেছেন, ঘুম না এলে আমি বিছানা ছেড়ে উঠে যাই এবং আবার নতুন করে এসে শুই। এটা একটা রিবুট সিস্টেমের মতো কাজ করে।
সাধারণত মাথায় কোনো চিন্তা ঘোরাফেরা করার কারণেই অনিদ্রা দেখা দেয় এবং এটা বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রেই সত্যি। মিজ ইসপির মতে, যদি ঘুম না আসার সমস্যা একরাতের পর কয়েক দিন ধরে হতে থাকে এবং এরপর কয়েক সপ্তাহে গড়ায়, এভাবে তিন মাস বা তার বেশি সময় পার হয়ে যায়, তাহলে আমরা এ অবস্থাকে অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া বলি।
অধ্যাপক ইসপি বলেন, ঘুমের ওপর আমরা দারুণভাবে নির্ভরশীল। নানা কিছুর বিবর্তন ঘটলেও ঘুমের ওপর নির্ভরতার পরিবর্তন হয়নি। বরং বলা চলে মানুষ হিসেবে আমাদের মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত বড় ও জটিল প্রকৃতির, এর বিশ্রামের জন্যই তুলনামূলক বেশি ঘুমের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিপদ বা যে কোনো ধরনের হুমকির জন্য আমাদের মস্তিষ্কে যে এক ধরনের সতর্কতা তৈরি হয়, যেটা আমাদের ঘুমকে তাড়ানোর কাজ করে, এ প্রবণতাও বিবর্তনের সঙ্গে পাল্টায়নি। দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ আমাদের মস্তিষ্কে এমন একটা অনুভূতি তৈরি করে, যা আমাদের মনে করতে বাধ্য করায়–– জেগে না থাকলেই বিপদ!