
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আবারও ডেঙ্গু এলো তেড়ে
আরও পড়ুন
ডেঙ্গু ২০১৯ সালে অতিমারি বা মহামারি হিসাবে দেখা দেয়। এরপর প্রতি বছরেই ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে। এটা একটি মশাবাহিত রোগ। গত বছরের ন্যায় এ বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ রোগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখার শেষ পর্ব প্রকাশ হলো আজ।
* কীভাবে ডেঙ্গুজ্বর ডায়াগনোসিস করবেন
উপসর্গ ও লক্ষণই ডেঙ্গু জ্বর নিরূপণের সর্বোকৃষ্ট উপায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রক্তের সিবিসি-এর মাধ্যমে ভাইরালক্ষিভার না অন্য কোনো ইনফেকশন তার ধারণা পাওয়া যায়।
▶ প্লেটলেট কাউন্ট : ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায়, ১৫০,০০০ per cmm-এর নিচে নেমে আসে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার-এ ১০০,০০০-এর নিচে নেমে আসে, এমনকি ১০,০০০ বা এর নিচেও নামতে পারে। জ্বর শুরু হওয়ার ৩-৪ দিন পর থেকে প্লেটলেট কাউন্ট কমা শুরু হয়। যখন জ্বর চলে যায় তখন থেকেই প্লেটলেট কাউন্ট কমা শুরু হয়। পরবর্তী ৩-৫ দিন পর্যন্ত কমতে থাকে। ৬-৭ দিন পর থেকে আবার ওঠা শুরু করে। ৯-১০ দিনের মাথায় প্লেটলেট কাউন্ট স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
▶ ডেঙ্গু এনএসওয়ান : ডেঙ্গু জ্বর হওয়া সত্ত্বেও ২৫ শতাংশ কেসে NS1 নেগেটিভ হয়ে থাকে। তাই NS1 নেগেটিভ হলেই ধারণা করা যাবে না যে ডেঙ্গু হয়নি।
▶ এন্টি ডেঙ্গু এন্টিবডি (আইজিজি ও আইজিএম)।
* চিকিৎসা
বিছানায় শুয়ে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেবেন। জ্বরের দিনগুলো এবং তার সঙ্গে জ্বর ছাড়ার পর আরও তিন দিন বিশ্রামে থাকুন। কারণ, জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর ক্রিটিক্যাল পর্ব শুরু হয়। ডেঙ্গু জ্বরের দুটি ফেইজ। একটি হচ্ছে ফিবরাইল ফেইজ আরেকটি ক্রিটিক্যাল ফেইজ। ফিবরাইল ফেইজে জ্বর থাকে এবং এ জ্বর ৪-৫ দিন স্থায়ী হয়। ক্রিটিক্যাল ফেইজ হচ্ছে সংকটনাপন্ন ফেইজ। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর এ ফেইজ শুরু হয়। এখানে রোগী দুর্বল থাকে, রোগীর ব্লাড প্রেসার কমে যায়, প্রায় প্ল্যাটিলেট কমে যায়, অনেক সময় রোগীর রক্তক্ষরণ হয়, অনেক রোগী শকে চলে যায়। এটাকে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বলে। এ ফেইজটি ৩-৪ দিন স্থায়ী হয়। সু-চিকিৎসা না পেলে রোগীর যেকোনো অঘটন ঘটতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের পানীয়, নরম এবং সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। পানীয় খাবারের মধ্যে ঘরে তৈরি শরবত, স্যালাইন, ডাবের পানি, ঘরে তৈরি ফলের রস, মাংসের স্যুপ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। সহজপাচ্য খাবার যেমন-ঝাউ ভাত দেওয়া যেতে পারে। তবে সফ্ট ড্রিংকস পানীয় প্রক্রিয়াজাত ফলের রস ইত্যাদি খাবেন না। জ্বর যদি ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে যায় তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন। যদি মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা এবং গায়ে ব্যথা থাকে তাহলেও প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা অন্তর অন্তর দিতে পারেন। প্রতিবারে ১টি থেকে ২টি ট্যাবলেট খেতে পারেন। তবে এ সময় এসপিরিন জাতীয় শরীরের ব্যাথা নাশক ওষুধ, স্টেরয়েড ও কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। ভাইরাস জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা নেই। তবে ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে যদি অন্যকোনো পায়োজেনিক ইনফেকশন থাকে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।
* ডেঙ্গু জ্বরে জটিলতা
ডেঙ্গু জ্বরে প্লেটলেট ও রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (রক্তচাপ পাওয়া যায় না, রক্তক্ষরণ, রোগী অচেতন), পেটে পানি জমা, ফুসফুসের আবরণের ভেতর পানি, ব্রেনে, হৃদপিন্ড, কিডনি, লিভার ও অগ্নাশয়ে প্রদাহ, অবসাদ ও হতাশার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবে যারা বিশ্রামে থাকে না, দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসা নেয় না, যাদের আগে ডেঙ্গু হয়েছিল বা অন্যান্য সমস্যা আছে যেমন-ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ইত্যাদি, প্রান্তিক বয়স (বাচ্চা ও বুড়ো), মহিলাদের বিশেষ সময় (গর্ভাবস্থা, মাসিক চলাকালীন সময়) এবং যাদের শারীরিক ওজন বেশি এসব রোগীদের উপরোল্লিখিত জটিলতা দেখা যায়।
* কী কারণে রোগী সংকটাপন্ন হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়
যখন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা করে, দৌড়াদৌড়ি করে, অফিস আদালতে যায়, ব্যবসা বাণিজ্যে যায় অর্থাৎ বিশ্রাম নেয় না, যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে যায় না, যথাযথভাবে শিরায় স্যালাইন নেয় না, উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে যখন শক সিন্ড্রোম শুরু হয়, ডেঙ্গু যখন হৃদপিণ্ডে আঘাত হানে (কাডিয়াক এরেস্ট, অ্যারিথমিয়া, মায়োকার্ডাইটিস) এবং যখন ব্রেনে আঘাত হানে।
* জটিল রোগীর চিকিৎসা
▶ রোগীকে হাসপাতালে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ।
▶ যথাযথভাবে শিরায় ফ্লুইড পরিচালনা করা।
▶ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা। যেমন-Encephalitis হলে তার চিকিৎসা, Heart involvement হলে এর চিকিৎসা।
▶ রোগী অচেতন হলে আইসিইউতে স্থানান্তর।
লেখক : সাবেক ইউনিট প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।