Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

নাকে অ্যালার্জির সমস্যায় যা করণীয়

Icon

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী) 

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:৫৬ এএম

নাকে অ্যালার্জির সমস্যায় যা করণীয়

অ্যালার্জি প্রধানত ধুলাবালি, ঠান্ডা এবং নির্দিষ্ট খাদ্য-এ তিনটি কারণে হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় খাদ্যের অ্যালার্জি। যদিও অতি সংবেদনশীলতা অ্যালার্জির মূল কারণ। কিন্তু অ্যালার্জি ব্যক্তিবিশেষে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ভিন্ন ভিন্নরূপে হয়ে থাকে। অ্যালার্জি সর্দি নাকের একটি সমস্যা, যা নাসিকা ঝিল্লির প্রদাহের ফলে হয়ে থাকে। যদিও নাকের অ্যালার্জি, সর্দি কোনো মারাত্মক রোগ নয়, তবে এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। যেমন-শিশুদের স্কুলের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়, আবার অন্যদিকে পেশাজীবীদের কর্মস্থলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। মাঝে মাঝে অ্যালার্জিজনিত সর্দি ও হাঁচি জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

* কারণ

মূলত শ্বাসের সঙ্গে নাসারন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তুকেই অ্যালার্জির প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। তবে অ্যালার্জি উদ্রেককারী খাবার গ্রহণের কারণে নাকের এটি হওয়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। শ্বাসের সঙ্গে নাকের মধ্যে ঢুকে পড়া অ্যালার্জি উদ্রেককারী এ বস্তুকে বলা হয় অ্যালার্জেন।

▶ মাইট (এক ধরনের কিট) যা পুরোনো বইপত্র বা পত্রিকায় থাকে, বাসার পুরোনো ধুলা (ঘুণে ধরা); কসমেটিকস, ফুলের রেণু ও পশুপাখির লোমে অ্যালার্জেন (যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করে) থাকে।

▶ গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, শিল্পকারখানার বিভিন্ন উপাদানও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

▶ কিছু খাবার যেমন-ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি, বেগুন, হাঁসের ডিম কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

▶ শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে, তাই এ সময় এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। অনেকের মৌসুমি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় ছাড়া বাকি সময় থাকে না।

▶ বাসস্থান পরিবর্তন করে নতুন পরিবেশে গেলেও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস আক্রমণ করতে পারে। শতকরা ১২ ভাগ শহরবাসী নিশ্বাসের সঙ্গে পথের ধুলা/বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

* নাকের অ্যালার্জি কীভাবে হয়

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে রক্তে আইজি-ই (IgE)-এর যাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং এ আইজি-ই নাকের ভেতরে থাকা মাস্ট সেল নামক কোষকে ভেঙে দেয়। ফলে এই কোষ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নাকে প্রদাহ ঘটায়। ঠান্ডা থেকে নাসারন্ধ্রের স্নায়ুকোষের রিসেপ্টরকে উদ্দীপ্ত করার ফলে হাঁচির উদ্রেক করে।

* লক্ষণ

নাক চুলকানো, একনাগাড়ে কয়েকটি হাঁচি, নাক দিয়ে পানি ঝরে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাঝে মাঝে এর সঙ্গে মাথাব্যথা। অনেক সময় এসবের সঙ্গে কারও কারও চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। অনেকদিন ধরে এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে থলির মতো বড় এবং বিবর্ণ হয়ে যায়।

* অ্যালার্জি প্রতিরোধ

অ্যালার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো কারণ শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। এজন্য রোগীকে সতর্কতার সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে তার শরীরে কী কী কারণে অ্যালার্জি হয়। বলা হয়ে থাকে অ্যালার্জি চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো হেলথ এডুকেশন। যাদের এ সমস্যা আছে তারা শীতের ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে অথবা রাস্তায় গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে মুখবন্ধনী বা মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। যদি কারও কুকুর বা বেড়ালের সংস্পর্শে গেলে অ্যালার্জি হয়, তাহলে পশমযুক্ত প্রাণী ও পাখি থেকে দূরে থাকবেন।

* চিকিৎসা

এ সমস্যা দেখা দিলে তা চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় রেখে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ এ থেকে পরবর্তী সময়ে শ্বাসকষ্ট, বয়স্কদের নাকের পলিপসহ অন্যান্য জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জির কারণ এড়িয়ে চলা এ রোগের প্রধান চিকিৎসা, তবে এর সঙ্গে ওষুধ প্রয়োগ করে অনেকটাই উপশম বা মুক্তি পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে রোগীকে ধৈর্য ধরতে হবে। মনে রাখবেন ওষুধপত্র দেওয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী। এ রোগের চিকিৎসায় প্রধান ওষুধ হলো অ্যান্টি-হিস্টামিন, স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে। এছাড়া বয়সভেদে মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ট্যাবলেট বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে এই ক্ষেত্রে একনাগাড়ে অনেকদিন (৩ মাস বা এর অধিক) ব্যবহার করলে নাকের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই নাকের স্প্রে একজন নাক-কান-গলা রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ব্যবহার করবেন। কোনোভাবেই নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে নিজে থেকে কিনে কোন ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যারা অনেকদিন ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভুগছেন এবং ওষুধ দ্বারাও কোনো সুফল পান না, তাদের ক্ষেত্রে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সার্জনরা নাকের ভেতরে ফুলে যাওয়া মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) পুড়িয়ে দিয়ে (Electrocauterization) চিকিৎসা করে থাকেন তবে সেটা খুব কম ক্ষেত্রে করা হয়। অদূর ভবিষ্যতে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে ইমুনোথেরাপি পদ্ধতি চালু হতে পারে।

নাকের অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-সর্দির সুচিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে শতকরা ২৫ ভাগ রোগীর হাঁপানি হতে পারে। এছাড়া নাকের অ্যালার্জিজনিত সর্দি থেকে সাইনোসাইটিস, নাকের পলিপও হতে পারে।

ঘর, পর্দা, বিছানার চাদর ভালোভাবে পরিষ্কার রাখুন এবং রাস্তায় বের হলে নাকে রুমাল অথবা মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার ব্যবস্থা রাখুন। হাঁচির উদ্রেক এলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে শিষ্টাচার মেনে হাঁচি দিতে। নিয়ম মেনে চললে ভালো থাকা কঠিন বিষয় নয়।

লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন; সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম