ত্বকের বলিরেখা বয়োবৃদ্ধির স্বাভাবিক ঘটনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। ত্বকের আর্দ্রতা ও স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়। যার দরুণ ত্বক নিজেকে রক্ষা করার সক্ষমতা হারায়। এরই ফল হিসাবে ত্বকে বলিরেখা, ভাঁজ বা বিভিন্ন দাগ দৃশ্যমান হতে দেখা যায়।
তরুণ বয়সে ত্বকে কোনো সমস্যা হলে তা দ্রুতই সেরে যায়; কিন্তু বয়স যখন বেড়ে যায়, তখন ত্বকের নমনীয়তা কমে যাওয়ায় ত্বকে স্থায়ী গর্ত বা ক্ষত তৈরি হয়। তাহলে অনেকের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বা পর্যাপ্ত বয়স হওয়ার আগেই যে বলিরেখা দেখা দেয়।
▶ জীবনযাপন প্রক্রিয়া : ঠিকমতো না ঘুমানো, ভুল ভঙ্গিতে শোয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, শরীরচর্চা না করা, চোখ-মুখ কুঁচকে থাকা-এসব অভ্যাসের ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়তে পারে।
▶ পরিবেশ : বাতাসে থাকা ধোঁয়া, ধুলাবালি বা পরিবেশে বিদ্যমান নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্যাস লোমকূপের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের হার কমে যায়। ফলে ত্বকের নমনীয়তা হ্রাস পায়।
▶ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি : যারা অধিক রোদে কাজ করেন বা বাইরে দীর্ঘসময় খেলাধুলা করেন, তাদের ত্বকে অল্প বয়সেই বলিরেখা পড়ার ঝুঁকি বেশি।
▶ খাদ্যাভ্যাস : ভিটামিন, স্নেহ ও খনিজসমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি থাকলে অল্প বয়সেই ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
* প্রতিরোধে করণীয় ও বর্জনীয়
▶ বলিরেখা প্রতিরোধে প্রথমেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা জরুরি। অযথা রাতজাগার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। শোয়ার সময় বালিশ এমনভাবে রাখুন, যাতে মুখ বা গলার ত্বকে কোনোরূপ চাপ না পড়ে।
▶ প্রতিদিন কিছু সময় শরীরচর্চা করবেন। শারীরিক পরিশ্রমও গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনোভাবেই বেশি পরিশ্রম করবেন না।
▶ আনন্দ, বিরক্তি বা হতাশার অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় যথাসম্ভব চোখ-মুখ কুঁচকে থাকবেন না। গুরুত্ব দিন পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে। ভাজাপোড়া, বেশি তেলযুক্ত খাবার, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ, সি ও ই রাখবেন। পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া ও চিনি খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবেন।
▶ অধিক সূর্যালোক এড়িয়ে চলবেন। রোদের সময় বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। চোখে রোদপ্রতিরোধী চশমা ব্যবহার করা ভালো। লম্বা হাতাওয়ালা, ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন।
▶ দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন-ধোয়া-মোছার কাজের সময় হাতে গ্লাভস পরে নিন। ধুলাবালি, ময়লা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, লোশন ত্বকের জন্য ভালো। এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
* আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি
বলিরেখা দূরীকরণে সর্বাধুনিক চিকিৎসার নাম বোটক্স (বটুলিনাম টক্সিন)। মূলত ইনজেকশনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ব্যথামুক্ত উপায়ে বোটক্স করা হয়। ২৫ বছর বয়সের বেশি যে কেউ এ চিকিৎসা নিতে পারেন। একবার বোটক্স নিলে ৫-৬ মাস পরপর রিটাচ করতে হয়।
লেখক: চর্ম, যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চেম্বার : ল্যাবএইড আইকনিক, কলাবাগান, ঢাকা।