দৈহিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যর জন্য ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ও আরামদায়ক ঘুম আমাদের সক্রিয় ও সতেজ রাখে। সুস্বাস্থ্যের জন্য সময় ও পরিমাণ মতো ঘুমের পাশাপাশি পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত ঘুম উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের কারণ। অনেকের মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা যায়, যেমন-অনিদ্রা, স্লিপ অ্যাপনিয়া, অস্থির পায়ের সিন্ড্রোম ইত্যাদি। অন্যদিকে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ঘুমের ব্যাধি হওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকে।
* ঘুমে রোগগুলো কীভাবে হার্টের ক্ষতি করে
ঘুমের রোগগুলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা হার্টের সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া (যেমন অনিদ্রা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া) হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যারা কম ঘুমায় (দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টার কম) তাদের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে, অথবা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি কারও স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকে, তবে এ ধরণের ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা পঞ্চাশ ভাগের উচ্চরক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের হার্টের ছন্দে সমস্যা হতে পারে, যেমন অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (এক ধরনের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) এবং ব্র্যাডিকার্ডিয়া (ধীর হৃদস্পন্দনহার)। গুরুতর স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন হওয়ার আশঙ্কা সুস্থদের থেকে চারগুণ বেশি হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য চিকিৎসা না নিলে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়।
স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির করোনারি আর্টারি ডিজিজ অথবা হার্টের রক্তনালির রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী ছোট ছোট রক্তনালিগুলো যদি কম অক্সিজেন সরবরাহ করে তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যা পরে হার্ট অ্যাটকের আশঙ্কা বাড়ায়। করোনারি আর্টারি ডিজিজের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সত্তর ভাগ রোগীর স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে। স্লিপ অ্যাপনিয়া হার্ট ফেইলিউরকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
* স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে হৃদরোগ
স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে ঘুমের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যা দশ সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট সময় ধরে থাকে। এ সমস্যায় ঘুমের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ঘুমের সময় বার বার অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় হার্টে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। যা ঘুমের মাঝে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও প্রতিবার অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে হার্টবিট বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। গুরুতর স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে হার্টের ওপর চাপ বেড়ে যায়। যা হার্টকে বড় করে, পরবর্তীতে হার্ট ফেইলিউর হয়। তাই খারাপ ঘুমের লক্ষণ থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং কোন চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করুন।
নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন-
▶ মেজাজের ভারসাম্যে সমস্যা।
▶ দিনেরবেলা অতিরিক্ত ঘুম।
▶ বিছানায় অস্থিরতা (ঘুম আসতে দেরি হওয়া অথবা রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া)।
▶ তীব্র নাক ডাকা।
▶ রাতে ভালো ঘুম হওয়া সত্ত্বেও পরেরদিন সকালে সতেজভাবে জেগে না ওঠা।
ঘুমের রোগগুলোর চিকিৎসা করানো অন্যান্য মেডিকেল থেরাপির মতোই অপরিহার্য। অনিদ্রা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া উভয়ই চিকিৎসাযোগ্য রোগ। কিছু ওষুধ এবং আচরণগত থেরাপির মাধ্যমে অনিদ্রার চিকিৎসা করা হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করা হয় জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে যেমন-ওজন কমানো এবং ব্যায়াম করা। এছাড়া কিছু ডিভাইসের (CPAP/BPAP) মাধ্যমে, যা শ্বাসনালি খোলা রাখতে সাহায্য করে। পলিসমনোগ্রাফি অথবা স্লিপ টেস্ট করিয়ে ঘুমের রোগ নির্ণয় এবং কোন রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন সেটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নির্ধারণ করে দেন।
লেখক : স্লিপ কনসালটেন্ট, ইনজিনিয়াস পালমো ফিট, শ্যামলী (রিং রোড), ঢাকা।