পাকা ফলের ঘ্রাণ আটকে দিতে পারে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৩ পিএম
কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকেই মানুষ ঘ্রাণের বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতন হয়ে উঠেছে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মানুষের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের একটি দারুণ উপকারিতা খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে পাকা ফলের ঘ্রাণ ও গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি খাবারের ঘ্রাণ মানুষের শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে আটকে দিতে পারে।
বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ই-লাইফে প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন বায়ুবাহিত যৌগ যেগুলো বিভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ ছড়ায় সেগুলো শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ক্যানসার ও আলঝেইমারস-পারকিনসনের মতো বিভিন্ন নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের চিকিৎসার করা যেতে পারে।
যদিও নাকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ওষুধ গ্রহণের বিষয়টি মোটেও নতুন কোনো ধারণা নয়, কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কোষ, মাছি ও ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীর সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এক্ষেত্রে আরও বেশি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তবে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইডের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এসব ক্ষেত্রে যেসব যৌগ থেকে ঘ্রাণ নেওয়া হবে সেগুলো থেকে মানুষের অন্য ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থাকতে পারে। তাই এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।
এই গবেষণার প্রধান লেখক ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইডের মলিকুলার বায়োলজির শিক্ষক আনন্দশঙ্কর রয় বলেছেন, একটি ঘ্রাণ প্রকাশিত হওয়ার পর তা সরাসরি জিনের কার্যক্রম বদলে দিতে পারে অনেক সময়। এমনকি যেসব টিস্যুতেও কোনো ঘ্রাণ চিহ্নিত করার মতো গ্রাহক নেই সেগুলোও উদ্দীপিত হতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি বিস্ময়কর।
গবেষকেরা ড্রসোফিলা নামের এক ধরনের মাছি ও ইঁদুরের ওপর ঘ্রাণ সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। তারা ডায়াসিটল নামে এক ধরনের ছত্রাক থেকে নির্গত ঘ্রাণ শোকান মাছি ও ইঁদুরকে। ডায়াসিটল বিভিন্ন ফলের গাজন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীরা টানা পাঁচ দিন নির্দিষ্ট মাছি ও ইঁদুরের ওপর এই ডায়াসিটল প্রয়োগের পরীক্ষা চালান।
পরীক্ষাগারে তৈরি করা কোষের ওপর এই ডায়াসিটলের প্রভাবও খতিয়ে দেখেন বিজ্ঞানীরা। তারা দেখতে পেয়েছেন মানুষের কোষে হিস্টোন ডায়াসিটালেজ ইনহিবিটর হিসেবে কাজ করে। এটি মাছি ও ইঁদুরের জিনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। ফলে প্রাণীগুলোর মস্তিষ্ক, ফুসফুস ও মাছির অ্যানটেনার কার্যক্রম পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে।
হিস্টোন ডায়াসিটালেজ হলো এমন এক ধরনের এনজাইম যেগুলো ডিএনএ-এর চারপাশে দৃঢ়ভাবে হিস্টোনকে আটকে দেয়। ফলে এসব ডিএনএ-এর প্রকাশ কঠিন হয়ে যায়। মূলত এই পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করেই এরই মধ্যে ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসায় হিস্টোন ডায়াসিটালেজ ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা আরও দেখতে পেয়েছেন, ডায়াসিটল ব্যবহারের ফলে মানুষের মস্তিষ্কের ক্যানসারের জন্য দায়ী নিউরোব্লাস্টোম কোষের বৃদ্ধিকে আটকে দেওয়া যেতে পারে।
আনন্দশঙ্কর রায় বলেছেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান হলো, বিভিন্ন জীবাণু ও খাদ্য থেকে নির্গত কিছু উদ্বায়ী যৌগ (ঘ্রাণ) নিউরন ও অন্যান্য ইউক্যারিওটিক কোষের এপিজেনেটিক অবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে।
তবে অন্যান্য কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াসিটল ওষুধটি শ্বাসের মাধ্যমে নেওয়ার ফলে শ্বাসনালির কোষে পরিবর্তন ঘটে, এমনকি ফুসফুসের রোগ অবলিটারেটিভ ব্রঙ্কিওলাইটিস বা ‘পপকর্ন ফুসফুস’ নামে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর গবেষণার কথা বলেছেন।