অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের অতিসাধারণ একটা সমস্যা নিয়ে প্রায়ই আসেন। তার বাচ্চা পড়া মুখস্থ রাখতে পারে না, পড়লে ভুলে যায়। পড়ায় সে যথেষ্ট সময় দেয়, তার পরও ভুলে যায়।
পড়া মুখস্থ করে মনে রাখা, পুনরায় বলা এবং পরীক্ষার হলে গড় গড় বলে যাওয়া বা লিখে যাওয়া এসব নির্ভর করে প্রধানত পড়ার স্টাইলের ওপর।
১. প্রথম কথা হলো যা পড়ছেন বা যা মুখস্থ করতে বসছেন আপনাকে সেটা বুঝে বুঝে পড়তে হবে।
২. যতক্ষণ পড়ায় থাকবেন ততক্ষণ শিক্ষার্থীর ভাবনায় সেই বিষয়টি থাকতে হবে। সেটা ৫ মিনিট হোক বা ১০ মিনিট যত সময় হোক ততটা সময়।
৩. অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী মুখস্থ করছেন এক টপিক কিন্তু ভাবনায় আরেকটা। এটা ঠিক নয়। এর ফলে শিক্ষার্থী ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে বিষয়টি পড়লেও সেটা স্বাভাবিকভাবেই মনে থাকবে না।
একটা উদাহরণ দিই, ধরুন আপনি মুখস্থ করেছেন বাংলাদেশের জলবায়ু। সুতরাং পড়ার সময় ভাবনার মধ্যে রাখবেন জলবায়ুবিষয়ক চিন্তাভাবনা।
৪. মুখস্থ করার পর দিনের অন্যান্য সময়ে সে টপিকটা সম্ভব হলে একাধিকবার মনে করার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ ধরুন, সকালে মুখস্থ করার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের জলবায়ু। সুতরাং দুপুরে, বিকালে বা রাত্রে সে মুখস্থ করার বিষয়টি মনে চেষ্টা করতে হবে। দেখবেন হুবুহু হয়তো সেটা মনে আসছে বা কিছু কিছু লাইন বাদ পড়ে যাচ্ছে। সমস্যা নেই, সেটিই স্বাভাবিক। প্রধান কাজ হলো— যে অংশ বাদ পড়বে সেটি আবার একবার দেখে নেওয়া।
৫. শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবা বা অভিভাবককে সচেতন হতে হবে৷ শিশু যে বিষয়টি পড়েছিল, খেলাচ্ছলে বা গল্পেরচ্ছলে দিনের কোনো একসময়ে তাকে বলতে হবে, "আচ্ছা বাবু সকালে যে বিষয়টি তুমি মুখস্থ করেছ দেখি একটু মনে করো তো। এভাবে তাকে পড়া রিট্রাইভের প্র্যাকটিস করাতে হবে। এতে মুখস্থ করা টপিকটি স্থায়ীভাবে তার মেমোরি সেন্টারে জায়গা করে নেবে।
৬. মুখস্থ করার সময়ে অন্য কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন মোবাইলে গেইম খেলা, কারও সঙ্গে গল্প করা, চ্যাটিং করা ইত্যাদি। এতে মুখস্থ হবে না। হলেও মনে থাকবে না।
৭. মুখস্থ করার পর সেটা লেখার চেষ্টা করা। লেখায় ভুল সংশোধন করা। পুনরায় শুদ্ধ করে লেখা।
৮. যা মুখস্থ করা হয়েছে, সেই টপিকটাকে সেদিন বা অন্যান্য দিন বা কয়েক দিন পর পর মাঝেমধ্যে রিভিশন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। রিভিশন বাধ্যতামূলক। রিভিশন না হলে পড়া মনে থাকবে না।
৯. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো— পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম। ঘুমের সময় মুখস্থ করা টপিক ব্রেইনের একটা জায়গায় (মেমোরি সেন্টারে) স্থায়ীভাবে স্থান করে নেয়। সুতরাং পর্যাপ্ত ঘুম হতেই হবে।
১০. খাবারের একটা ভূমিকা আছে মনে রাখায়। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন। আমাদের ব্রেইনের নিউরোট্রান্সমিটারগুলো প্রোটিনের তৈরি। বাইরের ফাস্ট ফুড, চকোলেট, চিপস, ভিটামিন মিনারেল সাপ্লিমেন্ট সমৃদ্ধ গুড়া পাউডার না খাওয়া।
১১. অনেক বাচ্চা আছে, যারা দ্রুত মুখস্থ করতে পারে আবার সেটা মনেও রাখতে পারে চমৎকার। এর মূল রহস্যই হলো, তারা উপরোক্ত পন্থাগুলো অনুসরণ করে চলে।
সুতরাং যারা খুব ভালো মনে রাখতে পারে, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনে মুখস্থ রাখার টেকনিক গুলো শিখে নেওয়ার তাগাদা দিতে হবে বাচ্চাকে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে উৎসাহ দিতে হবে। শিশুদের বেড়ে ওঠায়, শেখায় তার বন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি) বিসিএস (হেলথ)
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি।
ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন