Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

নিয়মিত রক্তদানে বহুমাত্রিক উপকার

Icon

ডা. ডালিয়া নাসরীন

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম

নিয়মিত রক্তদানে বহুমাত্রিক উপকার

রক্তের প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় মানুষকেই। রক্তদান নিঃসন্দেহে মহৎ ও মানবিক। তবে এর সাথে নানান জটিল দুরারোগ্য ব্যাধী থেকে বাঁচার উপায়ও হলো নিয়মিত রক্তদান।  যেমন, ক্যান্সার। হ্যাঁ, নিয়মিত রক্তদান যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় তা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত। 

বিজ্ঞানীরা বলেন, রক্ত দেয়ার সময় শরীরের অতিরিক্ত লৌহ উপাদান বেরিয়ে যাওয়ার ফলে রক্তদাতার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। বছরে দুইবার রক্তদানে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টার সাড়ে চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে বের করেন যে, রক্তদানের সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমার সরাসরি সম্পর্ক আছে। 

যারা বছরে অন্তত দুই বার রক্ত দান করেন, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে গলা, ফুসফুস, লিভার, কোলন ও পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় রক্ত দিলে।ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে ৩৭%! 

রক্তদানের সাথে হৃদরোগ ঝুঁকি কমানো নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন একদল গবেষক। তারা ২০ বছর ধরে নির্দিষ্ট রক্তদাতাদের অবজার্ভ করেন। 
এই পরীক্ষায় হৃদরোগের চেয়েও ক্যান্সারের ফলাফল দেখে তারা বেশি বিস্মিত হন। গবেষণায় দেখা যায়, রক্তদাতাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৭% পর্যন্ত নেমে গেছে। 

আর যাদের ক্যান্সার হয়েছে, তাদের মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। এই ফলাফলে বিস্ময় প্রকাশ করে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট জার্নাল (Journal of the National Cancer Institute)। 

এক রিপোর্টে তারা বলেন, “results almost seem to be too good to be true.”. এ থেকে তারা উপসংহার টানেন যে, ৬ মাসের মধ্যে শুধু একবার রক্ত দান করলেই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসে।

কীভাবে কমে ক্যান্সারের ঝুঁকি? 

রক্তের অন্যতম উপাদান হলো লৌহ বা আয়রন। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণায় চমকে উঠছেন যে, রক্তের আয়রন উপাদানের ভারসাম্যের সাথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কতটা সরাসরিভাবে সম্পর্কিত। 

গবেষকদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় উঠে এসছে যে, রক্তের আয়রন উপাদান বেশি হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। 

যার জন্যে গবেষকরা এই নিয়ে গবেষণাপত্র লিখেছেন যে, ক্যান্সার কি তাহলে ফেরোটক্সিক ডিজিজ (ferrotoxic disease)? Ferro মানে লৌহ-বিশিষ্ট। টক্সিক মানে বিষাক্ত। 
অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করছেন, শরীরে আয়রন উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি শরীরে যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে তার কারণে ক্যান্সার হয় কিনা! 

কারণ আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে রক্ত নেন, তাদের শরীরে আয়রন উপাদান বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

এমনকি মহিলাদের যাদের কোনো জটিলতার কারণে যেমন এনডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) মাসিকের সময় ওভারিতে রক্তপাত হয় তাদের ওভারিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে। নিজ এবং অন্যের জীবন রক্ষার্থে নিয়মিত রক্ত দিন  শুধু ক্যান্সারই নয়, রক্তদানের আছে আরও বহুমুখী উপকার। 

রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে চার থেকে আট সপ্তাহ। 

আর এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়। তবে রক্তদানের এ উপকারগুলো আসলে তারাই পাবেন যারা নিয়মিত রক্তদান করেন।

লেখক: জুনিয়র কনসালট্যান্ট, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম