Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

নারীর হরমোন রোগ

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম

Icon

ডা. হাসান হোসেন আঁখি

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১১:০৭ এএম

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম হচ্ছে এমন একটি অবস্থা, যেখানে নারীর ডিম্বাশয়ের পুরুষ হরমোন (এন্ড্রোজেন) বেশি বেশি তৈরি করে। স্বাভাবিক অবস্থায় যা অতি অল্প পরিমাণেই নিঃসৃত হয়। পলিসিস্টিক ওভারিতে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট থাকে। এ অবস্থায় একজন নারীর ওভুলেশন করার জন্য পর্যাপ্ত হরমোন থাকে না। ফলে ওভুলেশন না হওয়ার জন্য ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। এ সিস্টগুলো এন্ড্রোজেন নামক হরমোনটি তৈরি করে। এর ফলে মেয়েদের মাসিকও বিলম্বিত হয় অথবা বেশি বেশি হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন অবাঞ্ছিত লোম, ব্রণ, মুখ তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া, ঘাড়ে কালো দাগ, চুল পড়ে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এর কারণ সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। এর ফলে নারীদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। ফলে শরীর ইনসুলিনকে ব্যবহার করতে পারে না। এটা জেনেটিক্যালি বাহিত হতে পারে। দেখা যায় বোন বা মায়ের থাকলে কন্যারও এ সমস্যা হতে পারে।

রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা অনেকটা ধারণা করতে পারি যে, তিনি পিসিওসের (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) রোগী। আল্ট্রসাউন্ড করলে আমরা তার ওভারিতে নেকলেস প্যাটার্ন সিস্ট দেখতে পাই, সঙ্গে স্টোমা অনেক মোটা থাকে এবং ওভারির ভলিয়মও বেশি থাকে। এ ছাড়া রক্তে হরমোন পরীক্ষা করলেও বুঝতে পারি যে মেয়েটি পিসিওস রোগে আক্রান্ত।

রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা বলি সেটা হচ্ছে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন অর্থাৎ জীবনযাত্রার পরিবর্তন। খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে, প্রোটিন ভেজিটেবলস্ এবং ফল বেশি খেতে হবে। বিশেষ করে ভাত, আলু, ময়দা, চিনি, কফি, কোক, ফাস্টফুড এগুলোকে না বলতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ এক্সারসাইজ করতে হবে, ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিশোরী বয়সের রোগীর সমস্যা শুধু মাসিক নিয়ে, তাদের মাসিক নিয়মিত করার জন্য আমরা অনেক সময় মেটফরমিন, মায়োনাসিটল এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে দেই। এতে করে অনেক সময়ই তার মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়। ব্রণের জন্য ক্লিনডামাইসিন লোসন, অবাঞ্ছিত লোমকে ওয়াক্সিং করে দূর করা, ইত্যাদি উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসাও দিয়ে থাকি। মোটকথা হচ্ছে এন্ড্রোজেন লেভেলকে কমিয়ে আনতে হবে, তবেই বডির সব হরমোনগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারবে। আর যেসব রোগী বন্ধ্যত্ব নিয়ে আসে তাদের চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রথমেই বিএমআই ঠিক করে নেওয়া জরুরি। তারপর ডিম ফোটার জন্য আমরা কিছু ওষুধপত্র দিয়ে থাকি। সঙ্গে টিভিএস ফলিকোলোমেট্রি করে ডিম পর্যবেক্ষণ করে থাকি। যখন ডিম ফোটার উপযোগী হয় তখন আমরা ট্রিগারিং করে থাকি। এভাবে চিকিৎসায় অনেক সময় বন্ধ্যত্ব দূর হয়ে থাকে এবং বাচ্চা ফোটে। তবে অনেক সময় আরও কিছু উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যেমন গোনাডট্রপিন ইনজেকশন, আই ওয়াই, ল্যাপরোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং, এমনকি আইভিএফ পর্যন্ত লাগতে পারে।

আবার এসব পিসিওএস রোগী ভবিষ্যতে টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে অস্বাভাবিক চর্বি, এমনকি এন্ড্রমেট্রিয়াল (জরায়ু) ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। সঙ্গে বন্ধ্যত্বের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। অবাঞ্ছিত লোম, কালচে দাগ ব্রণ, চুল পড়ে যাওয়া এগুলোর কারণে একজন মেয়ের যে সৌন্দর্য সেটা হারিয়ে যায়। এ সমস্যার জন্য বিউটি থেরাপি লেজার থেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকি।

তাই পিসিওএস প্রতিরোধ খুব জরুরি। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন, পরিমিত শরীরচর্চা এসব কিছুই পারে আমাদের পিসিওএসের হাত থেকে রক্ষা করতে। পিসিওএস একটি হরমোনজনিত রোগ, ফলশ্রুতিতে অনেক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। তাই হরমোনটিকে ঠিকমতো ব্যালেন্স করে রাখতে পারলেই আমরা বাকি সব জটিলতা এড়াতে পারব।

লেখক: ফার্টিলিটি কনসালট্যান্ট ও গাইনোকোলজিস্ট, বিআইএইচএস জেনারেল হসপিটাল, ঢাকা।

নারী রোগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম