পাঁচ বছরের শিশু নাসিফ। প্রায়ই ঠান্ডা-সর্দি লেগে থাকে। মাঝে মধ্যে শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়, ঘুমানোর সময় মুখ দিয়ে লালা ঝরে। কখনোবা মুখ হা করে ঘুমায় এবং গলায় শব্দ হয়। সমবয়সিদের তুলনায় চঞ্চলতা ও বুদ্ধিমত্তার অভাব দেখা যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় তার এ সমস্যার মূলে রয়েছে নাকের পেছনে থাকা টনসিল, এটি হচ্ছে এডিনয়েড।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের নাক-কান-গলা রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা নাঈম।
এডিনয়েড’স কী
নাকের ঠিক পেছনের জায়গাটিকে বলে ন্যাসোফ্যারিংস। আর এখানে থাকা টনসিলকে বলে এডিনয়েড, যা বাইরে থেকে দেখা যায় না। আমাদের মুখ গহ্বরে বেশ কিছু টনসিল একটি রিংয়ের মতো থাকে, একে বলে ওয়েলডিয়ার্স রিং। এ রিংয়ের সবার উপরে থাকা টনসিলই হচ্ছে এডিনয়েড। বারবার ইনফেকশন এবং প্রদাহর জন্য এটি বড় হয়ে যায় এবং সমস্যা তৈরি করে, তখন একে এডিনয়েডস বলে।
লক্ষণ কী কী
* সর্দি-জ্বর লেগে থাকা, হা করে ঘুমানো, ঘুমের মধ্যে শব্দ করা, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে যাওয়া অথবা বারবার এপাশ ওপাশ করা, ঘুমানোর সময় নাক ডাকা। অনেক সময় ইনফেকশন নাকের পেছন থেকে ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে কানে চলে যায়। ফলে কানে পর্দার আড়ালে ফ্লুইড জমে এতে কানে কম শোনা, এমনকি কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।
* পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া এবং সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে ইন্টেলেকচুয়ালিটি সমস্যা অর্থাৎ বাচ্চা কিছুটা হাবাগোবা অথবা কম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে।
* টেলিভিশনের সাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়া বা সামনে গিয়ে শোনা।
* পেছন থেকে কথা বললে বা ডাক দিলে না শোনা কিংবা হ্যাঁ/জি বলে আবার বলার জন্য অনুরোধ করা।
এরকম কিছু সমস্যা বাচ্চার থাকে তবে অবশ্যই একজন ভালো নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
এক্স-রে কেমন হলে অপারেশন লাগবে
এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এডিনয়েড ন্যাসোফ্যারিংসের কত শতাংশ জায়গা দখল করে আছে তার উপর ভিত্তি করে গ্রেডিং করা হয় এবং অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
* গ্রেড ৪ (৭৫ শতাংশ) বা এর বেশি হলে অবশ্যই অপারেশন লাগবে।
* গ্রেড ৩ (৫০-৭৫ শতাংশ)-এর সঙ্গে কানে কম শোনার সমস্যা থাকলে অবশ্যই অপারেশন লাগবে। কানে শোনার সমস্যা না হলে অপারেশন না করে ফলোআপ করতে হবে।
* গ্রেড ২ (২৫-৫০ শতাংশ) অপারেশন না করে চিকিৎসা নিলে চলবে।
* গ্রেড ১ (<২৫ শতাংশ) সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে।