পাইলস। ফাইল ছবি
পায়ুপথের একটি জটিল রোগ পাইলস। অনেকেরই এ সমস্যা দেখা দেয়। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, কোষ্ঠকাঠিন্য, আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়া থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। আবার সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে পাইলস থেকে বেঁচে থাকা যায়।
পাইলস বলতে আমরা বুঝি মলদ্বারের ভেতরে ফুলে ওঠা রক্তের শিরার একটি মাংসপিণ্ড। এ রূপ রক্তের শিরার মাংসপিণ্ড বা ‘কুশন’ সব মানুষেরই রয়েছে।
তাই প্রকৃত অর্থে পাইলস বা ‘হেমোরয়েড’ আমরা তখনই বলি, যখন এটি কোনোরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করছে। যেমন মলদ্বারের বাইরে ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ড অথবা রক্ত যাওয়া। প্রতিটি মানুষের তিনটি পাইলস বা ‘কুশন’ আছে।
বড় পাইলসের মাঝখানে ছোট ছোট পাইলসও থাকতে পারে। মলত্যাগ করার সময় শিরাগুলো কিছুটা ঝুলে পড়ে এবং রক্ত ভর্তি হয়ে ফুলে ওঠে তার পর ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টি-কেয়ার হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক অ্যান্ড লেজার সার্জন ডা. আসিফ আলমাস হক।
পাইলস কখন হয় : ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের ভেতর এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ২০ বছর বয়সের নিচে পাইলস খুব একটা দেখা যায় না। এ রোগ মহিলাদের চেয়ে পুরুষের কিছুটা বেশি হয়।
কারণ : কয়েক শতাব্দীর গবেষণা সত্ত্বেও পাইলসের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটিত হয়নি। তবে কিছু কিছু রোগ পাইলস হওয়াকে ত্বরান্বিত করে। যেমন— মলত্যাগে অতিরিক্ত কোঁত দেওয়া, অনিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি। অন্য কিছু কিছু কারণ আছে, যার জন্য পাইলস হতে পারে। যেমন- বংশগত, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, অনেকক্ষণ গরমে থাকা, ভারী ওজন তোলা, গর্ভাবস্থা, আঁটসাঁট পোশাক পরা, হরমোনের প্রভাব, আঁশজাতীয় খাবারের অভাব ইত্যাদি।
উপসর্গ : বহিঃস্থিত পাইলসের ক্ষেত্রে মলদ্বারের বাইরে ফোলা থাকে এবং কিছুটা ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। অভ্যন্তরীণ পাইলসের ক্ষেত্রে টয়লেটে টাটকা লাল রক্ত দেখা যায়। কোনোরূপ ব্যথা থাকে না। মলত্যাগের শেষে রক্ত যায়। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় যায় আবার কখনও তীরের বেগে যায়। রক্ত যাওয়ার পর যদি বেশি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয় তা হলে এনাল ফিশার বা ক্যান্সার হতে পারে। রক্ত যেতে যেতে রোগী গভীর রক্তশূন্যতায় ভুগতে পারেন। মলদ্বারের বাইরে পাইলসটি ঝুলে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মলত্যাগ শেষে পাইলসটি আপনা-আপনি ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না। থ্রম্বোসিস হলে বা পাইলস বাইরে অতিরিক্ত ঝুলে থাকলে ব্যথা হতে পারে। মলদ্বারে শুধু পাইলস রোগই হয় না আরও অনেক রোগ হয়, যার শতকরা বিশ ভাগ রোগী পাইলসে আক্রান্ত।
প্রতিরোধের উপায় : এ রোগ প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে সময়মতো কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা করা, টয়লেটে বসে বসে পেপার/বই না পড়া, খাবারের সঙ্গে আঁশজাতীয় জিনিস যেমন-ফল, সবজি, সালাদ পরিমাণ মতো খাওয়া, দৈনিক ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা, ভারি ওজন না তোলা, অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ না থাকা ইত্যাদি।