ফাইল ছবি
হার্নিয়া একটি জটিল রোগ। এ রোগের প্রধান উপসর্গ ব্যথা। হার্নিয়া বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করা লাগে। কিন্তু রোগীরা সহজে অস্ত্রোপচারে যেতে চান না। এ কারণে জটিলতা আরও বেড়ে যায়।
হার্নিয়ার লক্ষণ উপসর্গ এবং এ রোগে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের জেনারেল অ্যান্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির কনসালট্যান্ট ও অধ্যাপক ডা. আনিসুর রহমান।
হার্নিয়া অপারেশনের মাধ্যমে শরীরের স্বস্থান থেকে বিচ্যুত অঙ্গ বা অঙ্গের কোনো অংশকে আবার এর যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে দুর্বল পারিপার্শ্বিক মাংসপেশি ও কোষকলাগুলোকে শক্ত ও টান টান করে দেওয়া হয়। অপারেশন একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, স্বাভাবিকভাবেই সহজে কেউ অপারেশনে রাজি হন না এবং বিভিন্ন অজুহাতে অপারেশন করতে দেরি করতে চান। পূর্ণ সিদ্ধান্তে আসার আগে নিম্নবর্ণিত বেশ কিছু বিষয় আপনার সার্জনের সঙ্গে আলাপ করে নিন, যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য আপনাকে সাহায্য করবেন।
উপসর্গ
হার্নিয়া থাকলেই যে সবার উপসর্গ থাকবে তা নয়, বিশেষ করে ছোট হার্নিয়ার ক্ষেত্রে। উপসর্গগুলোর মধ্যে সচরাচর ব্যথাই প্রধান উপসর্গ। এ ছাড়া পেটে বা কুঁচকিতে ভারি ভাব অনুভূত হতে পারে। আপনার কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, হার্নিয়া আপনার কাজে বা অবসরে যে কোনো সময় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কাজেই হার্নিয়ার কারণে আপনার কাজ থেকে বা ছুটির অবসরে, স্বাস্থ্যের কতটুকু ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তা আপনাকে বুঝতে হবে। অপারেশনে যত বিলম্ব করবেন, ততই ভালো হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেরি হবে। আপনার যদি হার্নিয়ার কারণে নির্দিষ্ট উপসর্গ থেকে থাকে, বিশেষ করে ব্যথা থেকে থাকে, তবে সার্জন আপনাকে অপারেশন করতে বলবে।
যদি কোনো উপসর্গ না থেকে থাকে, তবে সার্জন হয়তো আপনাকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণের কথা বলবে। এসব কিছুর আগে আপনি অত্যন্ত সততার সঙ্গে আপনার সার্জনকে জানান, হার্নিয়ার উপস্থিতির কারণে আপনার শারীরিক কী কী অসুবিধা হচ্ছে।
অস্ত্রোপচারে দেরি করলে কী কী স্বাস্থ্যঝুঁকি
হার্নিয়া অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক না করলে, একটি মারাত্মক ঝুঁকি হলো— এটি পেটের দেয়ালের বাইরে আটকে গিয়ে ঘায়ের সৃষ্টি করতে পারে, যাকে ইনকার্সেরেটেড হার্নিয়া বলা হয়। ফলে হার্নিয়াতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে ও অন্ত্রের মধ্যে খাদ্য চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। যাকে প্যাঁচালো বা স্ট্র্যাংগুলেটেড হার্নিয়া বলা হয়। এ ক্ষেত্রে অপারেশন জরুরি হয়ে পড়ে। সব হার্নিয়াই যে এই ঝুঁকিতে পড়বে তা নয়, তবে এটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ধরনের একটি অতিজরুরি অবস্থা, যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেই অবস্থায় যেন আপনি না পড়েন সে জন্য হলেও হার্নিয়া অপারেশনে বিলম্ব করা উচিত নয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হার্নিয়া বড় হতে থাকে এবং পারিপার্শ্বিক কোষ কলাগুলোকে দুর্বল করতে থাকে। ফলে উপসর্গের তীব্রতার ঝুঁকি বাড়তে থাকে, যেমন ব্যথা বাড়তে থাকে ও ফলে আপনার জীবনযাত্রায় সমস্যা বাড়তে পারে। সার্জনরা জানে ছোট আকারের হার্নিয়া অপারেশন করে ঠিক করা একটি বড় আকারের হার্নিয়া অপারেশনের চাইতে সহজতর ও কম জটিল। কাজেই হার্নিয়া অপারেশন করে না ফেলে অপারেশন বিলম্বিত করলে, উপসর্গগুলো আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। অস্ত্রোপচার দ্রুত করে ফেললে আপনার সময় শুধু নষ্ট হবে না।
আপনার যদি হার্নিয়ার উপসর্গ না-ও থাকে, আপনি দেরি না করে এখনই অপারেশন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। হার্নিয়ার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন অনেকটা অবশ্য প্রয়োজনীয়-ই বলা চলে। অপারেশন দেরি করার ফলে হার্নিয়া বড় হতে থাকে আর পারিপার্শ্বিক কোষকলা ও মাংসপেশি দুর্বলতর হয়ে পড়ার কারণে অপারেশন জটিলতর হতে পারে ও অপারেশন পরবর্তী সুস্থতা বিলম্বিত হতে পারে।
হার্নিয়া অপারেশনে দেরি করলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা, তা নির্ধারণ করতে পারে আপনার বয়স। হার্নিয়া অপারেশনকে কয়েক মাস বা কয়েক বছরের জন্য বিলম্বিত করলে এখনকার মতো তুলনামূলক ভালো স্বাস্থ্য সামর্থ্য বা শারীরিক সতেজতায় পরে আপনি না-ও থাকতে পারেন, যা আপনার অপারেশনকে জটিলতর করে তুলতে পারে এবং ভালো হয়ে ওঠাকে ব্যাহত করতে পারে। কাজেই বয়স যত কম হবে হার্নিয়া অপারেশনের উপকারিতা তত বেশি। আপনার বয়স যদি পঁচাত্তর বা তারও বেশি হয়, আপনি খুব একটা কর্মক্ষম জীবনে না থাকেন এবং হার্নিয়ার তেমন কোনো উপসর্গ না থাকে, সার্জন সে ক্ষেত্রে হয়তো হার্নিয়া অপারেশন নাও করতে পারেন। এ বয়সে অপারেশনের ঝুঁকি হার্নিয়ার ঝুঁকির চেয়েও বেশি।