
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
ইফতারের প্রধান খাবার ডাল

আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সারা দিনের উপবাসের পরই চলে ইফতারের আয়োজন। এ সময় ডালের ব্যবহার বেশি দেখা যায়, যেমন-ছোলা ভাজা, কাঁচা ছোলা, পেঁয়াজি, বেগুনি, ফুলুরি, বুন্দিয়া, হালিম, চটপটি, ঘুঘনি, দইবড়া ইত্যাদি। সব কিছুই তৈরি হয় ডাল দিয়ে। ডাল একটি আঁশযুক্ত, আমিষযুক্ত খাবার। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকায় ডাল অত্যন্ত জনপ্রিয়। ডাল বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। যেমন-খোসাসহ, খোসা ফেলে, পাউডার আকারে (বেসন), আবার অঙ্কুরোদগম ঘটিয়েও ডালের ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেসব ডাল পাওয়া যায়, সেগুলো হলো-মুগ, মসুর, বুট, অড়হড়, খেসারি, মাসকলাই, মটর ইত্যাদি। রাঙামাটি ও বান্দরবানে কিছু কিছু রাজমা পাওয়া যায়। ছোলা ও মটর বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন-চাট্, ভুনা, চটপটি, ঘুঘনি অথবা শুধু তেলে ভেজে। বুট অথবা খেসারির ডাল দিয়ে বেসন তৈরি করা হয়। ইফতারে বেসনের তৈরি নাশতাই বেশি দেখা যায়। যেমন-বেগুনি, আলুর চপ, বুন্দিয়া ইত্যাদি। ডালের হালুয়া একটি মুখরোচক ও জনপ্রিয় খাবার। ডালের পুষ্টি উপাদান নিুরূপ-
* আমিষ
ডালে শতকরা ২০-২৫ ভাগ আমিষ বা প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে লাইসিন ও থ্রিওনাইন নামক এমাইনো অ্যাসিড থাকে। যা চাল ও গমের মধ্যে থাকে না। আবার চাল ও গমের মধ্যে ট্রিপটোফ্যান ও মিথায়ানিন নামক যে অপরিহার্য এমাইনো অ্যাসিড থাকে, সেটা ডালের মধ্যে থাকে না। এ কারণে চাল ও ডাল রুটি ও ডাল, দুধ ও ডাল খুবই পুষ্টিকর খাবার। কারণ, এতে সব কয়টি এমাইনো অ্যাসিডের কারণে খাবারটির জৈবমূল্য বেড়ে যায়। সুতরাং রোজার সময় খিচুড়ি ও হালিম যেমন উপাদেয় তেমনি পুষ্টিকর।
* চর্বি ও শর্করা
ডালে চর্বির পরিমাণ খুবই সামান্য। ১০০ গ্রামে ১-২ ভাগ চর্বি থাকে এবং শর্করার পরিমাণ থাকে ৫২-৬০ ভাগ। ছোলায় ৫ ভাগ চর্বি এবং ৬০.৯ গ্রাম শর্করা থাকে। এজন্য ওজন বেশি থাকলে ছোলা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।
* ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ
ডালে ভালো পরিমাণে আছে রাইবোফ্লাভিন, লিনোলিনিক অ্যাসিড ও থায়ামিন। সব ধরনের ডালে উচ্চমূল্যের লৌহ রয়েছে এবং এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে।
* অঙ্কুরোদগম ও গাঁজান
সাধারণভাবে যে কোনো ডালকে ২-৩ দিন ভিজিয়ে রাখলে এর থেকে অঙ্কুর বের হয়। এ অঙ্কুরোদগমের পর মুগ, কলাই, মটর, ছোলা প্রভৃতিতে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, এ, ই ও ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ হয়। তেমনি গাঁজান ডালের ভেতরও বি-ভিটামিন দেখা যায়। ইডলি, দোসা, ধোকলা, জিলাপি গাঁজান ডাল দিয়ে করা হয়। অঙ্কুরিত ডাল সালাদের যেমন শোভা বর্ধন করে, তেমনি স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
* রান্না ও পরিপাক
বাড়িতে ডাল সাধারণভাবে রান্না করে খাওয়া হয়। ছোলা বা আস্ত বুট, মটর, রাজমা এগুলো রান্না করতে হলে পুরো রাত ভিজিয়ে রেখে বেশি পানি দিয়ে সিদ্ধ করে, তবে রান্না করতে হয়। ডাল ভালোভাবে সিদ্ধ না হলে হজম হতে অসুবিধা হয়। ডালকে যদি আটা জাতীয় আকারের সঙ্গে রাখা হয় তাহলে সেটা সম্পূর্ণরূপে পরিপাক ও শোষণ হয়। ডালে যে অ্যান্টি ডাইজেসটিভ ফ্যাক্টর (ট্রিপসিন ইনহিবিটর) থাকে, তা রান্নার মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অন্যান্য ডালের তুলনায় মুগ ও মাসকলাই ডাল ভালোভাবে হজম হয়। কাঁচা ডাল অপেক্ষা সুসিদ্ধ ডালের প্রোটিন আমাদের শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে।
* রোগের ক্ষেত্রে ডাল
ছোলা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমিয়ে রাখে। আবার ধীরে ধীরে শোষিত হয় বলে, রক্তে শর্করার মাত্রাকে দ্রুত বাড়ায় না। সদ্য রোগমুক্ত রোগীকে বা তীব্র জ্বরের সময় রোগীর অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে ডালের পাতলা স্যুপ দেওয়া যেতে পারে। আবার ডালে ট্রিপটোফ্যান থাকে না বলে ডালের স্যুপের সঙ্গে দুধের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। বদহজম, পেটফাঁপা, বাত ও কিডনি রোগের ক্ষেত্রে ডাল একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত। ডালের আমিষ অন্ত্রে শোষিত হতে দেরি হয় বলে পেপটিক আলসারে ডাল বাদ দেওয়া উচিত। ডালে পিউরিন, পটাশিয়াম ও ফসফরাস আছে বলে বাত ও কিডনি রোগে বাদ দেওয়া ভালো।
লেখক : সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, শ্যামলি ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।