Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের অস্বাভাবিক আচরণ ও সমাধান

Icon

ডা. সাইফুন নাহার

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের অস্বাভাবিক আচরণ ও সমাধান

ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের অস্বাভাবিক আচরণ ও সমাধান

কেসস্টাডি : মিসেস আফরোজা ৬৫ বছর বয়স, কিছুদিন ধরে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। যেমন- খেয়ে বলছেন খাইনি, না খেয়ে বলছেন খেয়েছি। তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজেই কোথায় রাখছেন ভুলে যাচ্ছেন, বা প্রায়ই খুঁজে পাচ্ছেন না। পরিবারের অন্যদের পোশাক নিজের ওয়্যারড্রোবে এনে রাখছেন। অন্যের পোশাক গায়ে দিয়ে বসে আছেন। একদম পরিত্যক্ত কিছু জিনিস হ্যান্ডব্যাগে রাখছেন, আবার খুব প্রয়োজনীয় কিছু ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিচ্ছেন। এসব আচরণের পরিপ্রক্ষিতে পরিবারের সদস্যরা তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং জানতে পারেন তিনি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত। ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু জিনিস লুকিয়ে রাখতে পারেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন বা হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ বিষয়গুলো অন্যদের কাছে কষ্টদায়ক হতে পারে। কারণ, তারা মনে করতে পারে যে, ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি যিনি তাদের অতি আপনজনদের কাছ থেকে জিনিস চুরি করছে। আবার এটি হতাশাজনকও হতে পারে, যদি জিনিসগুলো খুঁজে পেতে সময় ব্যয় করতে হয় বা না পাওয়া যায়।

* আক্রান্ত ব্যক্তি কেন জিনিসপত্র লুকাতে, মজুত করতে বা হারাতে পারেন

স্মৃতিভ্রংশের শিকার ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ফলে জিনিসগুলো হারান। তারা সাধারণত কিছু জিনিস যেমন-ব্যাংকের চেকবই, ক্রেডিট কার্ড, গহনা, মোবাইল ফোন, টুপি, চশমা বা চাবি ভুল জায়গায় রাখতে পারেন বা কোনো আইটেমকে নিরাপদ রাখার জন্য কোথাও রাখতে পারেন এবং তারপর এটি কোথায় রেখেছেন তা ভুলে যেতে পারেন। তারা অস্বাভাবিক জায়গায় এ আইটেমগুলো রেখে যেতে পারেন-উদাহরণস্বরূপ, বাথরুমে রিমোট কন্ট্রোল রাখা বা ফ্রিজে টি-ব্যাগ। আবার উলটো ঘটনাও ঘটতে পারে। যেমন-ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো নিজেই কোথাও তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যত্ন করে রেখেছেন এবং পরবর্তীতে ভুলে গেছেন যে কোথায় রেখেছেন, তখন তিনি ভ্রান্তধারণা পোষণ করতে পারেন যে কেউ হয়তো ইচ্ছে করেই তার জিনিসপত্র সরিয়ে রাখছে। এটি পরে এক ধরনের বিভ্রম বা ডিলিউশনে রূপ নিতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় জিনিসগুলো লুকিয়ে এবং মজুত করে, ব্যক্তিটি পরিস্থিতির কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারেন। তিনি মনে করতে পারেন, তার জিনিসপত্র মজুত করা দরকার। এতে ব্যক্তি এবং তাদের চারপাশের উভয়ের জন্যই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটি লক্ষ্য করাও গুরুত্বপূর্ণ যে, ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি যা বলছেন তাতে সত্যও থাকতে পারে। তার ডিমেনশিয়া আছে বলে তার বক্তব্যকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ মানসিক কারণে যারা প্রতিবন্ধী তাদের অসহায়ত্বের সুযোগও অনেকে নিতে পারে এবং তা হতে পারে তারই পরিচর্যায় নিয়োজিত ব্যক্তিটিরই মাধ্যমে।

* কীভাবে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীকে সহায়তা করা যায়

▶ আইটেমগুলো এমন জায়গায় রাখার চেষ্টা করতে হবে যেখানে এসব রাখতে ব্যক্তিটি অভ্যস্ত থাকে- উদাহরণস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট হুকে চাবি ঝুলিয়ে রাখা বা সবসময় একই ড্রয়ারে রাখা।

▶ গুরুত্বপূর্ণ বা প্রায়ই ভুল জায়গায় থাকা আইটেমগুলো একাধিক /বিকল্প/কপি রাখার কথা বিবেচনা করতে হবে, যেমন-চাবি, চশমা বা গুরুত্বপূর্ণ নথি।

▶ রুম এবং ড্রয়ারগুলো পরিপাটি রাখতে হবে, যাতে জিনিসগুলো হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে এবং সেগুলো ভুল জায়গায় থাকলে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। আইটেমগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেগুলো প্রায়ই ব্যবহৃত হয়, যেখানে সেগুলো দেখা যায় এবং যেখানে সহজেই অনুপ্রবেশ করা যায়।

▶ এগুলো যাতে ভুল জায়গায় না যায় তা নিশ্চিত করতে ‘অক্ষর’ বা ‘পোস্ট’ দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে হবে।

▶ যে আইটেমগুলো প্রায়ই হারিয়ে যায়, যেমন- চাবি খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য একটি লোকেটর ডিভাইস বিবেচনা করা যেতে পারে।

▶ এই বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য প্রাত্যহিক জীবনে সহায়ক বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার নেওয়া যেতে পারে।

▶ সব ট্র্যাশবক্স ঢেকে রাখুন বা দৃষ্টির বাইরে রাখুন। আলঝাইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এর ব্যবহার মনে রাখতে পারেন না। তাই না বুঝেই অনেক মুল্যবান বস্তু সেখানে লুকিয়ে রাখতে পারেন। তাই ট্র্যাশ কন্টেইনারগুলো খালি করার আগে পরীক্ষা করতে হবে, যদি সেখানে কিছু লুকানো থাকে বা দুর্ঘটনাবশত ফেলে দেওয়া হয়ে থাকে।

পরিশেষে বলতে হয়, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিটি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মতোই এবং কিছুটা বেশি পরিচর্যা পাওয়ার অধিকার রাখেন। এদের নিয়ে হাসি/তামাশা, উপহাস, পরিহাস ইত্যাদি বিবেকহীন, অমানবিক আচরণ ঘৃণ্য এবং বর্জনীয়।

লেখক : সাইকিয়াট্রিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, এডিকশন সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম