শিশুরা ঘুমালে মুখ থেকে লালা পড়ে! এটা স্বাভাবিক! কিন্তু যদি বড়দের ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা পড়ে তাহলে কিন্তু তা চিন্তার বিষয়! প্রায় দিনেই লজ্জায় পড়তে হয়? সকালে বালিশ লালায় ভিজে যায়? তবে কিন্তু সাবধান! কেন পড়ে লালা? কীভাবে রেহাই পাবেন? জানুন। খবর মেডিকেল নিউজ টুডের।
লালা কেন ঝরে: মানবদেহ প্রতিদিন ১ লিটারেরও বেশি লালা উৎপাদন করে। এটি লালাগ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। জেগে থাকাবস্থায় আমরা লালা ঝরতে দিই না। সাধারণত তা গিলে ফেলা হয়। পরক্ষণে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে পুনরায় লালা উৎপাদিত হতে থাকে। ঘুমে বিভোর থাকাবস্থায় লালা যেহেতু গিলে ফেলা যায় না, তাই মুখে লালা জমতে শুরু করে। এর ফলে ঠোঁটের কোণ দিয়ে লালা বাইরে ঝরে পড়ে।
লালা ঝরা কোনো রোগের লক্ষণ: অনেকেই ভাবতে পারেন, লালা ঝরা হয়তো একটি সাধারণ বিষয়। তবে জানলে অবাক হবেন, বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে লালা ঝরতে পারে। স্ট্রোক বা সেরিব্রাল পলসিসহ একাধিক স্ক্লেরোসিসের (এমএস) কারণেও আপনার মুখ দিয়ে নিয়মিত লালা ঝরতে পারে।
সর্দি বা সংক্রমণজনিত কারণে নাক বন্ধ অবস্থায় থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণে লালা ঝরতে পারে। কারণ এ ক্ষেত্রে ঘুমানোর সময় শ্বাস নেওয়ার জন্য যখন আপনি মুখ খুলে ঘুমাবেন; তখন লালা জমে তা বাইরে বেরিয়ে আসবে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রিফ্লেক্স ডিসঅর্ডার (জিইআরডি) এর কারণেও মুখ থেকে লালা ঝরতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো কিছু গিলতে অসুবিধা হয়। এ সমস্যায় যারা ভুগছেন; তাদের মুখ দিয়েও লালা ঝরতে পারে।
কিছু ওষুধের কারণেও এমনটি ঘটতে পারে। অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ (বিশেষত ক্লোজাপাইন) এবং আলঝাইমারস চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত ওষুধসহ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে।
এমএস, পারকিনসন, পেশীবহুল ডিসস্ট্রফি এবং এমনকি কিছু ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থুতু গিলতে অসুবিধা হয়।
স্নায়ুজনিত বিভিন্ন ঝুঁকির কারণ হতে পারে মুখ দিয়ে লালা ঝরা। যারা নিদ্রহীনতার সমস্যায় ভুগছেন; তাদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যাটি নিয়মিত দেখা দিতে পারে।
শ্বাসকষ্ট, জ্বর, অ্যালার্জি বা সাইনাস সংক্রমণের কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাক বন্ধ থাকার কারণে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ক্ষেত্রেও মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে।
যদি মাউথ আলসার থাকে, সে ক্ষেত্রেও মুখে থুতু বেড়ে যায়। এ কারণেও লালা ঝরতে পারে। এ সময় প্রতিরোধক ওষুধ খেলে সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
লালা পড়া বন্ধে করণীয়
চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস: কাত বা উপুড় হয়ে ঘুমানোর কারণে অভিকর্ষজ টান থেকে মুখ দিয়ে লালা পড়ে থাকে। এতে মুখের গাল গড়িয়ে তা বালিশ এবং অনেক সময় কাঁথা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে বালিশ ও কাঁথা ভিজে দুর্গন্ধ হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে পারেন। আর রাতে যেন কাত বা উপুড় হয়ে না ঘুমিয়ে পড়েন, সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন।
উঁচু বালিশ ব্যবহার: প্রতিদিনের ঘুমানোর বালিশটি একটু খেয়াল করুন। হয়তো আপনার বালিশটি নিচু। ঘুমানোর সময় মাথা যেন শরীরের সমতল থেকে কিছুটা উচুতে থাকে, সেটি নিশ্চিত করুন। মাথা যদি শরীরের সমতল থেকে কিছুটা উচুতে থাকে, তাহলে মুখ বন্ধ থাকবে এবং স্বাভাবিকভাবেই লালা পড়বে না।
মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করা: এমন অনেকেই আছেন যারা ঘুমের সময় নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। এ কারণেও মুখ দিয়ে লালা পড়ে থাকে। নাকের ন্যাসাল সাইনাস বন্ধ বা আটকা থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ জন্য ঘুমের সময় নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন। আর যদি নাকে সাইনাসে সমস্যা থাকে তাহলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইউক্যালিপটাসের মতো এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করুন। এতে সাইনাস থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়, ঘুমও ভালো হয়। এছাড়া প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধের জন্যও লালা পড়ে: কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে লালা তৈরি হয়। ফলে ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। এ জন্য ওষুধ সেবন করা হলে সেখান থেকে তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন। সাময়িক সময়ের জন্য ওষুধ হলে তা ওষুধের ডোজ শেষ হলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে এরপরও যদি লালা পড়তে থাকে, তাহলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
ঘুমের ব্যাঘাত: স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমে ব্যাঘাত থেকেও ঘুমের সময় লালা পড়ে। এ জন্য ঘুমে ব্যাঘাত হচ্ছে কিনা, সেটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নাক ডাকা, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস হওয়া ও লালা পড়া হচ্ছে এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। মূলত ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকের উচ্চ ঝুঁকি থাকলে এই সমস্যা হয়ে থাকে।