জন্ডিস খুব সাধারণ রোগ মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু সবসময় সাধারণ থাকে না। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। মূলত রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে প্রস্রাবের রং, চোখের শ্বেতমণ্ডল, ত্বক ও মুখের ভেতর হলুদ দেখায়। এ পরিস্থিতিকেই আমরা জন্ডিস বলে থাকি।
সাধারণত যকৃৎ বা পিত্তনালির কোনো সমস্যা দেখা দিলে জন্ডিস হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালেই এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হয়। এ সময় প্রচণ্ড গরমে দূষিত জল, শরবত গ্রহণের মাধ্যমেই জন্ডিসের ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, জন্ডিস কেন হয়
মূলত তিনটি কারণে জন্ডিসের সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমত, হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ। দ্বিতীয়ত, পিত্তনালির ব্লক বা পিত্তরসের পথে বাধা। তৃতীয়ত, হিমোলাইসিস বা সময়ের আগেই রক্তের লোহিত রক্তকণিকার ভেঙে যাওয়া। এ তিনটি কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ নানারকম ভাইরাস। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই ভাইরাসের নাম আমরা কমবেশি জানি। হেপাটাইটিস এ এবং ই দূষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। অন্যদিকে বি এবং সি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে আর অনিরাপদ যৌনসংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসগুলো ছাড়াও বিপাকজনিত কিছু সমস্যায়, অ্যালকোহল সেবন বা অটোইমিউন কিছু রোগে যকৃতের প্রদাহ হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন জন্ডিস হয়েছে
গ্রীষ্মকালে মানুষের ডায়রিয়া, হজমজনিত সমস্যা, পেটের গোলমালের সঙ্গে দেখা দেয় জন্ডিসও। জন্ডিসের সাধারণ উপসর্গ হলো চোখ ও প্রস্রাবের রং হলদে হয়ে যাওয়া। ত্বক বা মুখের ভেতরও হলুদ দেখায়। এছাড়া অরুচি, বমি বমি ভাব বা বমি, অবসাদ, জ্বর জ্বর ভাব, কখনো পেটব্যথাও হতে পারে। এমনটা হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা, লিভারের এনজাইমগুলো পরীক্ষা করলেই জন্ডিস হয়েছে বোঝা যায়। তবে এই জন্ডিসের কারণ কি, তা জানার জন্য ভাইরাস পরীক্ষা করা দরকার। এই ব্যাধি সরাসরি আক্রমণ করে আমাদের লিভারকে। আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে লিভার। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষুধা কমে যায়। খাওয়া-দাওয়ায়ও অনীহা জন্ম নেয়। ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। তাই আপনার যদি ওজন কমার সমস্যা থেকে থাকে তবে তার প্রকৃত কারণ এখনই খুঁজে বের করুন। কেননা ওজন হ্রাসও জন্ডিসের একটি অন্যতম লক্ষণ।
জন্ডিস হলে কী করবেন
এ সময় পূর্ণ বিশ্রাম নিন। বিশ্রাম না নিলে বিপাক বাড়বে, যকৃতের ওপর চাপ বাড়বে। ফলে বিলিরুবিন আরও বাড়বে। প্রয়োজনে মাত্রা বেশি হলে শয্যাশায়ী অবস্থায় থাকুন। স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করুন। খাবার নিয়ে অতিরিক্ত বিধিনিষেধের দরকার নেই। পুষ্টিকর, রুচিকর, স্বাস্থ্যকর যেকোনো খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। স্বাভাবিক মাত্রায় জল পান করুন। অতিরিক্ত জলপান, আখের রস, নানা রকমের জুস জন্ডিসে উপকার আনে বলে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। প্রতিদিন স্নান করুন। পরিচ্ছন্ন থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে পারেন।