Logo
Logo
×

ঢালিউড

সেন্সরপ্রথা বাতিলের দাবি ঢালিউড নির্মাতাদের

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:১৫ এএম

সেন্সরপ্রথা বাতিলের দাবি ঢালিউড নির্মাতাদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এখনো তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। 

পুনর্জন্ম হয় বাংলাদেশ। গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এখন এই নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এরই মধ্যে এ অন্তর্বর্তী সরকার চারদিকে সংস্কারের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তারই পালাবদলে বিনোদন জগতের নির্মাতারা সিনেমা সেন্সরপ্রথা বাতিলের দাবি তুলেছেন। যেখানে বিনোদন জগতের শীর্ষ ইন্ডাস্ট্রি হলিউড, বলিউডসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের চলচ্চিত্রে সেন্সরপ্রথা নেই। শুধু সার্টিফিকেশন বোর্ড রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের ঢালিউডে সেন্সরপ্রথা রয়ে গেছে। প্রচলিত সেন্সরপ্রথা বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড করার দাবি তুলেছেন পরিচালকরা। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে পরিচালক-নির্মাতারা তাদের এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পরিচালক আশফাক নিপুন বলেছেন, আমাদের সেন্সর বোর্ড প্রাগৈতিহাসিকপ্রথায় চলছে। যেটা দিয়ে সিনেমা কিংবা শিল্পচর্চার গতি আটকে দেওয়া হয়। ‘শনিবার বিকেল’, ‘নমুনা’, ‘মাই বাইসাইকেল’, ‘কাঠগোলাপ’, ‘অমীমাংসিত’সিনেমা কোনো কারণ ছাড়াই আটকে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক সিনেমা কাটছাঁট করে নুলা করে দেওয়া হয়। এই পুরোনো প্রথা শিল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিল্পীর কাজ হচ্ছে, উন্মুক্তভাবে শিল্পচর্চা করা।

তিনি বলেন, সেন্সরপ্রথা বাতিল করতে হবে। সেন্সর বোর্ডের ন্যারেটিভের মধ্যে শিল্পীর চিন্তাকে বন্দি রাখার চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ বলেন— সেন্সর বোর্ড না থাকলে অশ্লীলতা চরম আকার ধারণ করবে। কাটপিসের যুগেও কিন্তু সেন্সর বোর্ড ছিল। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ নির্মাতা বলেন, আবার ওটিটি শুরুর দিকে কেউ কেউ বলছিলেন— ওটিটিতে অশ্লীলতা প্রচার করা হচ্ছে। ওটিটি বন্ধ করা হোক কিংবা নীতিমালা করা হোক। পরে কিন্তু কোনো নীতিমালা ছাড়া, সেন্সরশিপ ছাড়াই ‘মহানগর’, ‘কারাগার’, ‘কাইজার’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’র মতো কাজ এসেছে। এগুলো দর্শক গ্রহণ করেছে। দর্শকরা ‘মহানগর ৩’-ও চাইছে। এগুলো কোনো নীতিমালা কিংবা সেন্সর বোর্ড দিয়ে আটকানো হয়নি। যেটা গ্রহণ করার, সেটা দর্শক গ্রহণ করবেই।

আশফাক নিপুন বলেন, পৃথিবীর কোথাও সেন্সর বোর্ড নেই। সেন্সর বোর্ড ঠিক করে দিতে পারে না— দর্শক কী দেখবে আর কী দেখবে না। বিভিন্ন দেশে সার্টিফিকেশন বোর্ড আছে। সার্টিফেকশন বোর্ড থেকে সিনেমার গ্রেডিং দিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের এখানেও সেই চর্চাই চালু হওয়া উচিত। সার্টিফিকেশন বোর্ড ঠিক করবে— কোন সিনেমা কোন বয়সের উপযুক্ত। 

চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক ও নির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেছেন, দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে সেন্সরপ্রথা নেই। বহু আগেই এটাকে সংস্কার করে সার্টিফিকেশন বোর্ড করা হয়েছে। সেন্সরপ্রথার মাধ্যমে সিনেমাকে আটকে রেখে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে তো পারছেই না, বরং উল্টো পিছিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক আদর্শ মেনে সার্টিফিকেশন হতে পারে। এটি নির্ধারণ করবে, কোন কনটেন্ট কোন বয়সের মানুষ দেখবে। এটা পুরো দুনিয়ায় অনুসরণ করা হয়। মাঝের সময়ে দেশেও সার্টিফিকেশন বোর্ডের আলাপ শুরু হয়েছিল। এর খসড়া নীতিমালা পড়েছিও, সেটিও অনেক ত্রুটিতে ভরা ছিল। সার্টিফিকেশন বোর্ডের খসড়া বাতিল করে অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

রেদওয়ান রনি বলেন, বিদ্যমান সেন্সরপ্রথায় অনেক ভালো সিনেমা ঝুলে আছে। এখনো আলোর মুখ দেখেনি সেসব সিনেমা। এখন যেহেতু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছি, তাই সেন্সরপ্রথা বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করা হোক।

নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী বলেছেন, ছোটখাটো কারণে চলচ্চিত্র আটকে দেওয়া হয়। এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র আজও সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। অথচ অনেক নৃশংস ও নারীকে হেয় করা চলচ্চিত্র দিব্যি মুক্তি পায় এবং মহাসমারোহে হলে চলে। ক্রিটিক্যাল কোনো ছবি, যা দর্শককে ভাবায়, সেসব আটকে দেওয়া হয়। আগামী দিনে চাই, কোনো নির্মাতাকে যেন ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ করতে না হয়। সেই সঙ্গে গ্রেডিং হলে ভালো হয়। উদার ও শিল্পবোধসম্পন্ন সেন্সর বোর্ড চাই।

নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন বলেছেন, ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক ভারতবর্ষের মানুষকে নিপীড়নের জন্য এই আইনটা করা হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট। এরপর আইনটা প্রথমে পাকিস্তান, তারপর স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন নতুন নামে হাজির হয়েছে। কিন্তু এর মৌলিক প্রস্তাবনা বদলায়নি। সেন্সর বোর্ড হলো এই লিগ্যাসির গার্ডিয়ান। কতগুলো কাজকাম নাই টাইপের শিল্পী আর বাতিল আমলাদের মাস্তানির জায়গা। শিল্প, সাহিত্য আর সিনেমার মাধ্যমে মানুষের যৌথ প্রকাশ তো সমাজের মৌলিক অধিকার— একটি স্বাধীন দেশে তো সেন্সর বোর্ড বলে কিছু থাকার কথাই ছিল না।

তিনি বলেন, আগামী দিনে সেন্সর বোর্ড বলে কিছু দেখতে চাই না। যেটা থাকতে পারে, সেটি হলো ছবির রেটিং বোর্ড। তবে সেটা অবশ্যই যে কোনো প্রকার আমলামুক্ত হতে হবে। পদাধিকারবলে আমলারা কেন ছবির সিদ্ধান্ত নেবেন? বাগান করতে চাইলে আপনি নিশ্চয়ই পশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন না, তাই না! এটা তো ভয়াবহ অন্যায়। 

সাইমন আরও বলেন, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর এটা আর চলতে দেওয়া যায় না। তিনি ছবির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তাদেরই নেওয়া উচিত, যারা শুধু সিনেমার হালহকিকতই নয়, সেই সঙ্গে তাবৎ দুনিয়ার শিল্প-সাহিত্য এবং নিজের চলতি সমাজের পালসটাও বোঝেন।

পরিচালক ও নির্মাতা রায়হান রাফী বলেছেন, সেন্সর বোর্ডকে নির্মাতা ও প্রযোজকের কাছে আতঙ্কের জায়গা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তারা চাইলে কোনো ছবি আটকে দিতে পারে, আবার চাইলে ছেড়েও দিতে পারে। আমার ‘অমীমাংসিত’ ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি শুনেছি— ছবিটি প্রথমে সেন্সর বোর্ড দেখে ছেড়ে দিয়েছিল। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেটি আবার আটকেও দিয়েছে।

রায়হান রাফী বলেন, সারা পৃথিবীতে গ্রেডিং সিস্টেমে সেন্সর হয়। অনেকে বলেন, আপনার সিনেমায় মারামারি, খুনোখুনি আছে। বাচ্চাদের দেখানো যাবে কিনা? এটা আসলে সেন্সর বোর্ডই বলে দেবে, সারা পৃথিবীতে গ্রেডিং করা হয়। এটা ১৮ বছরের বেশিদের জন্য, এটা ১৬ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য। গ্রেডিং সিস্টেম চালু হোক।

তিনি বলেন, যেসব সিনেমা দেশ ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করে, সেগুলোর বিষয় আলাদা। একটু স্পর্শকাতর বিষয়, সত্য গল্প, যেটার সঙ্গে বাস্তবের মিল আছে, সেই সিনেমা আটকে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে পরিচালকদের গলা চেপে ধরে বোঝানো হয়, যা ইচ্ছা ভাবতে পারবেন না। এটা বন্ধ করা উচিত। যাদের সিনেমা সেন্সর বোর্ডে আটকানো আছে, অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। দর্শকদের সেগুলো দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক। পরিচালক হিসেবে একটা গল্প দর্শককে বলার অধিকার আছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম