Logo
Logo
×

ঢালিউড

চলচ্চিত্রের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিল সুনেত্রা: অঞ্জনা

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

চলচ্চিত্রের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিল সুনেত্রা: অঞ্জনা

নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা সুনেত্রা মারা গেছে। দেড় মাস আগে ২৩ এপ্রিল কলকাতায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৭ মিনিটে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিলম্বিত খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা জায়েদ খান।

সোহেল রানা প্রযোজিত ‘দস্যু বনহুর’ দিয়ে অঞ্জনার চলচ্চিত্রে অভিষেক। শামসুদ্দীন টগর পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে অঞ্জনা অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানার বিপরীতে। ১৯৭৬ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সেই বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। অন্যদিকে সুনেত্রা ছিলেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। থিয়েটারের মাধ্যমেই অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর। সুনেত্রাকে ঢাকাই সিনেমায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশি পরিচালক মমতাজ আলী। প্রথম দেখা যায় সে সময়ের হার্টথ্রব নায়ক জাফর ইকবালের বিপরীতে ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উসিলা’ সিনেমাতে।

শোনা যাচ্ছে, কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল চিত্রনায়িকা সুনেত্রার। আশি-নব্বইয়ের দশকে বড় পর্দার সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে এখন শোকসন্তপ্ত ঢালিউড তারকারা। তাদের একজন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা; যিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন সুনেত্রার মৃত্যুতে। মনের কষ্ট থেকে সুনেত্রাকে নিয়ে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এফডিসিতে শুটিংয়ের ফাঁকে অঞ্জনা ও সুনেত্রার পরিচয়। এরপর দুই অভিনেত্রীর বন্ধুত্ব। আসা-যাওয়া ছিল বাসায়। প্রায় দুই নায়িকা গল্প করে সময় কাটাতেন। চলচ্চিত্র সূত্রে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব টানা এক দশকের বেশি সময় অব্যাহত ছিল। এরপর আড়ালে চলে যান সুনেত্রা। ১৫ বছর আগে একবার ফোনে কথা হয়েছিল, এরপর আর দুজনের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। সুনেত্রার মৃত্যুর খবর শুনে নিজেদের বন্ধুত্বের কথা সংবাদমাধ্যমে জানান অভিনেত্রী অঞ্জনা নিজেই।

শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে সুনেত্রার কিছু ছবি যোগ করে এক পোস্টে অঞ্জনা লিখেন, সুনেত্রা আমাদের মাঝে আর বেঁচে নেই শুনে এতটা কষ্ট পেলাম, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। অশ্রুসিক্ত নয়নে বারবার সেই মায়ামাখা মিষ্টি হাসির অপরূপ চেহারাটা চোখে ভাসছে। আশির দশকে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য সুপারহিট ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের গুণী চিত্রনায়িকা সুনেত্রা। কিংবদন্তি চিত্রনায়কদের সঙ্গে সে অনেক ভালো মানের, মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে। নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, ফারুক, জাফর ইকবাল, জসীম, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জ্বল, ওয়াসিম, মাহমুদ কলি, জাভেদ, রুবেল ও মান্নার সঙ্গেও রয়েছে তার অভিনীত অনেক চলচ্চিত্র। কিন্তু তারপরও একরাশ কষ্ট নিয়ে সে এক সময় কলকাতায় পাড়ি জমায়। সেখানেও সে কিছুসংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর একসময় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। আর কখনোই কারও সামনে আসেনি।

অঞ্জনা তার লেখায় উল্লেখ করে লিখেছেন, অনেক কষ্ট নিয়ে মারা গেছেন সুনেত্রা। তোমার অন্তিমযাত্রা শান্তির হোক বোন। আমাদের ক্ষমা করে দিও, আমরা তোমার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি। অনেক ভালো রুচিসম্মত চলচ্চিত্র তুমি আমাদের উপহার দেওয়ার পরও তোমাকে দিতে পারিনি জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান। গুণীরা এভাবেই অনেক চাপা অভিমান নিয়ে চলে যায় না ফেরার দেশে। চলচ্চিত্রের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিল সুনেত্রা। এই নোংরা রাজনীতির কারণে আশির দশকে সুনেত্রার মতো অনেক গুণী শিল্পী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। তখনকার সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডে থেকেও যারা সুনেত্রার মতো এমন প্রতিভাময়ী গুণী শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করেছেন, সবার প্রতি আমি ধিক্কার জানাই।

অঞ্জনা জানান, একসঙ্গে দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন দুজনে। খুব বেশি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় না হলেও অঞ্জনার গুলশানের বাড়িতে সুনেত্রাসহ চলচ্চিত্রের আরও অনেকের আড্ডা হতো বলে জানালেন এই অভিনয়শিল্পী। সে রকমই একটি আড্ডার স্থিরচিত্র অঞ্জনা তার ফেসবুকে পোস্টও করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চিত্রনায়িকা নুতন, অঞ্জনা, শবনম ও সুনেত্রাকে। 

ছবিটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অঞ্জনা বললেন, আমার গুলশানের বাড়িতে, বিয়ের পরপর। ১৯৯২ সালের দিকে হবে। বিয়ের পর আমাদের বাড়িতে একটা পার্টি ছিল। তখন তো চলচ্চিত্রের মানুষেরা মিলে কিছুদিন পরপর পার্টি হতো। সুনেত্রার সঙ্গে সম্পর্কটা যেহেতু বন্ধু, বোনের মতো ছিল—আমার বাড়ির সব আয়োজনে সে থাকত। আমরা অনেকটা কাছাকাছি বয়সের ছিলামও।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে সুনেত্রা নিজেকে অন্তরালে নিয়ে যান। একাকী থাকার সিদ্ধান্ত থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন বলে জানালেন অঞ্জনা। তাই আড়ালে থাকার সেই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজে থেকে ১৯৯৫ সালের পর আর যোগাযোগ করেননি বলেও জানালেন এই অভিনয়শিল্পী। তবে অঞ্জনা বললেন, ১৫ বছর আগে একবার আমাকে ফোন করেছিল। নম্বর জোগাড় করেছিল। কুশলাদি বিনিময় করেছিলাম, এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম