Logo
Logo
×

ঢালিউড

শাকিব খানের বিরুদ্ধে প্রযোজকের মামলার প্রস্তুতি

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

শাকিব খানের বিরুদ্ধে প্রযোজকের মামলার প্রস্তুতি

ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খানের বিরুদ্ধে মামলার ইঙ্গিত দিলেন কয়েকজন প্রযোজক। শিডিউল জটিলতার কারণে এই নায়ক কয়েকটি ছবির শুটিং শেষ করতে পারেননি। এতে লোকসানে পড়েছেন প্রযোজকরা। তাই তারা শাকিবের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসকে নিয়ে ‘মাই ডার্লিং’ ছবিটির শুটিং শুরু করেন পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে ছবির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়। এরপরই ছবিটি আটকে যায়। কোনোভাবেই নায়ক-নায়িকার শিডিউল পাওয়া যাচ্ছিল না। তত দিনে প্রযোজকের কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও শাকিব খান বাকি শুটিং শেষ না করে দেওয়ায় ২০১৮ সালের ২০ মার্চ ছবির প্রযোজক মনিরুজ্জামান আলাদাভাবে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতি বরাবর শাকিব-অপুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

সে সময় প্রযোজক মনিরুজ্জমান গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘যদি তিন সমিতির নেতারা দুজনকে ডেকে শুটিংয়ের শিডিউলের ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে তো ভালো। তা না হলে আদালতে যাব। কোনো উত্তর না পেলে মামলা করব।’ কিন্তু সে সময় সমিতির নেতারা সুবিচারের আশ্বাস দিলেও মাঝে আরও পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়েছে, সুরাহা হয়নি বিষয়টির।

বুধবার দুপুরে মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে যখন সমিতিগুলোর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম, তখনই বলেছিলাম সমিতি মীমাংসা করে না দিলে বিষয়টি নিয়ে শাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে যাব। কিন্তু ওই সময় অপু বিশ্বাস শিডিউল দিলেও শাকিব দেননি। সে সময় শাকিব খান নায়িকা পরিবর্তন করে অন্য নায়িকা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনকি বুবলীকেও নেওয়ার কথা বলেছিলেন। যদি তা না হয়, নায়ক-নায়িকার আলাদা আলাদা শট নিয়ে শুটিং শেষ করতে বলেছিলেন শাকিব খান। কিন্তু ছবিটির শুটিং আগে যতটুকু, যেভাবে হয়েছিল, নায়িকা পরিবর্তন করা বা আলাদা করে শট নেওয়া সম্ভব ছিল না। নায়িকা পরিবর্তন করলে সব ফুটেজ ফেলে দিয়ে নতুন করে পুরো শুটিংই করতে হতো। এতে দ্বিগুণ টাকা খরচ হতো। এতে রাজি না হওয়ায় শাকিবের আর শিডিউল পাওয়া যায়নি। ফলে আর কাজটি হয়নি।’

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘ভুল হয়েছে ২০১৮ সালেই মামলাটা করা উচিত ছিল। আদালতে গেলে আমি ন্যায়বিচার পেতাম। কারণ, আমি সঠিক পথে ছিলাম, এখনো আছি।’

এই প্রযোজকের ভাষ্য, শাকিবের তখন পারিশ্রমিক ১৫ লাখ টাকা ছিল। শুটিং শুরুর আগে এক চেকেই পুরো টাকা দিয়েছিলাম। প্রায় ৭০ ভাগ কাজ করার পর শাকিব-অপুর কারণে শুটিং আটকে গেল। প্রায় পাঁচ বছর শুটিং শেষ করে দেওয়ার কথা বলে চুক্তির বাইরেও শাকিব খান আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি পাঁচ লাখ টাকা ছবির আরেক শিল্পী অমিত হাসানের মাধ্যমে পরিশোধ করেছিলাম। এরপরও শাকিব খান শিডিউল দেওয়ার অঙ্গীকার রাখেননি। সেই পাঁচ লাখ টাকা ফেরতও দেননি।’

প্রযোজক বলেন, এই ছবির শুটিং শেষ না করে দেওয়ায় ১০ বছর ধরে তার প্রায় কোটি টাকা আটকে আছে।

শাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করার ইঙ্গিত দিয়ে এই প্রযোজক বলেন, ‘একবার ভেবেছিলাম যে ফুটেজ আছে, জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে ছবিটি মুক্তি দেব। কিছু টাকা লোকসান কমবে। কিন্তু ছবিটি এমনভাবে শুটিং করা, কোনোভাবেই সেটা সম্ভব হয়নি। আমার কষ্টের কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। সামনে সপ্তাহে চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা আছে। ফিরে একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার কাছে লিখিত সব ডকুমেন্টস আছে। মামলা করব। আর বাড়তি দেওয়া পাঁচ লাখ টাকাও আমাকে ফেরত দিতে হবে শাকিবকে।’

একইভাবে কাছাকাছি সময়ে মেঘমালা কথাচিত্র প্রযোজিত ও জি সরকার পরিচালিত ‘লাভ ২০১৪’ ছবিটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালে শুটিং শুরু হওয়া ছবিটির কাজ আজও শেষ হয়নি। পরের ধাপে গানসহ কিছু দৃশ্যের চিত্রায়ণ হওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে।

পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, ছবির কাজ ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। শাকিব খানের শিডিউলের আশায় অনেক বছর শুটিং বন্ধ আছে ছবিটির। সেই ২০১৪ সাল থেকে ছবির নাম প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য প্রতিবছর নাম পাল্টে যায়। ‘লাভ’-এর সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন নতুন সাল ২০১৫, ১৬, ১৭ ইত্যাদি। বছর যাচ্ছে, এভাবে ছবির নাম পরিবর্তন হচ্ছে।

বুধবার বিকালে জি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছবির শুটিং বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আমি একটু অসুস্থ, হাসপাতালে আছি। কথা বলতে পারছি না, পরে কথা বলব।’ এ কথা বলে রেখে দেন ফোন।

শাকিব খান ও শাবনূরকে নিয়ে ২০০৮ সালে নজরুল ইসলাম খান শুরু করেন ‘স্বপ্নের বিদেশ’। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে ছবির প্রায় ৮৫ ভাগ শেষ হয়। ৯০টি দৃশ্যের মধ্যে ১৬টি দৃশ্য বাকি থাকে। শাবনূরের কাজ শেষ হয়ে যায়। ওই সময় ছবির পেছনে প্রায় ৫১ লাখ টাকা খরচও হয়। গল্পের প্রয়োজনে শাকিবকে নিয়ে বাকি দৃশ্যগুলো বরফের মধ্যে শুটিং করার কথা ছিল। দেশের বাইরে গিয়ে বরফের মধ্যে কাজের জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন। শাকিবও জানিয়ে দেন বরফের মধ্যে শুটিং না করলে শিডিউল দেবেন না। ১৫ বছর ধরে এভাবেই আটকে আছে ছবিটি।

বুধবার দুপুরে পরিচালক বলেন, ‘কাজটি নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক কিন্তু আর হলো না। শেষ হয়েও শেষ হলো না ছবিটি। আর মাত্র ১৫ ভাগ কাজ শুটিং করা গেলেই ছবির কাজ শেষ হয়ে যেত। শাকিব ওই সময় বলেছিলেন বরফ ছাড়া তিনি শুটিং করবেন না, শিডিউল দেবেন না। কিন্তু প্রযোজক সে সময় বাজেট সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে কাজটিও আর শেষ করা হয়নি।’

এই পরিচালক আরও বলেন, ‘বছর চারেক আগে আমি অন্য একজন প্রযোজক ব্যবস্থা করে শাকিবের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার কাছ থেকে শুটিংয়ের ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া পাইনি। বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি। এর পর থেকে আর শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। এত দীর্ঘ সময় পরে আর গিয়ে লাভ হবে কি না জানি না।’

শাকিব খানের ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামের আরেকটি ছবি সাত বছর ধরে শুটিং বন্ধ আছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুটিং শুরু হয়। অ্যাকশন-থ্রিলার ঘরানার এ ছবিটি শুটিং শেষ করে ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু ছবির ২০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় জানা গিয়েছিল ছবির দুই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের (ভার্টেক্স মিডিয়া ও সিনেফ্যাক্ট) অন্তর্কোন্দলের কারণে ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। শুটিং শুরুর প্রায় সাত বছর পার হচ্ছে, এভাবেই পড়ে আছে ছবিটি। তবে শুটিংয়ের অংশবিশেষ থেকে ২০১৬ সালে ডিসেম্বর মাসে ২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ছবির একটি টিজারও প্রকাশ করা হয়। টিজার প্রকাশের পর সে সময় ছবিটি নিয়ে দর্শকের মধ্যে বেশ আগ্রহ টের পাওয়া গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

দীর্ঘদিন পর নতুন করে ছবিটির কাজ শেষ করার উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। ছবির নির্বাহী প্রযোজক মাহমুদুল হাসান গত সোমবার বিকালে জানান, শুটিং শুরুর প্রথম ধাপে ওই সময় অস্ট্রেলিয়ার লোকেশনে ৪০ ভাগ শুটিং করার কথা ছিল। কিন্তু তখন মাত্র ২০ ভাগ শুটিং করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ছবিটির বাকি শুটিং শেষ করার কথা ভাবছি। ছবির নায়ক শাকিবও চান ছবিটির শুটিং শেষ হোক। কয়েক দিন আগে আমরা শাকিব খানের সঙ্গে বসেছিলাম। তিনি শিডিউল দিতে রাজি হয়েছেন। মাঝে আমরা অন্য নায়কের সঙ্গে আরও দুটি ছবি করেছি। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে এই ছবিটির কাজ শুরু করব।’

মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ‘ওই সময় ২০ ভাগ শুটিংয়েই সব মিলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ খরচ হয়েছিল। এখন বাকি কাজ শেষ করতে আরও প্রায় দুই কোটি টাকা লাগবে। কারণ, গল্পের প্রয়োজনে দেশের বাইরেও বড় অংশের শুটিং করতে হবে। এরপরও ছবিটির কাজ শেষ করা না-করা শাকিব খানের শিডিউলের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করছে।’

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবিটি পরিচালনা করছেন আশিকুর রহমান। ছবিটিতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করছেন শিবা আলী খান।

তার শিডিউল না পাওয়ায় কয়েকটি সিনেমার শেষ করা যাচ্ছে না—প্রযোজকদের এমন অভিযোগ নিয়ে জানতে গত কয়েক দিন বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয় শাকিব খানের সঙ্গে। তিনি কল রিসিভ করেননি। মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি শাকিব খান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম