রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চোর ও ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) পরিবর্তনকারী চক্রের সদস্যরা। চুরি ও ছিনতাই হওয়া ফোন অল্প দামে কিনে তারা আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলে।
এ কাজে তাদের সময় লাগে মাত্র ৩-৭ সেকেন্ড। পরে সেগুলো বিভিন্ন দোকানের মাধ্যমে আবারও বিক্রি হয়ে চলে যায় সাধারণ মানুষের হাতে। ৫ বছর ধরে এভাবে মোবাইলের আইএমইআই পালটে ফোন বিক্রি করা ৪ চক্রের ২০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। এ চক্র এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। খন্দকার আল মঈন জানান, আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করায় চুরি ও ছিনতাই হওয়া ফোন উদ্ধার কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে ধারাবাহিক অভিযানে ঢাকার গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, ১টি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনে ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, ১টি ল্যাপটপ, ১টি এলসিডি মনিটর ও নগদ ১১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব পরিচালক বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের অবৈধ মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের তৎপরতা বেড়েছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের হোতা।
এ চক্র চোরাই মোবাইলগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার আব্দুর রহমান, রবিন ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে। তারা অন্যান্য ছিনতাইকারীর কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল স্বল্পমূল্যে কিনে নেয়। গ্রেফতার দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে।
তিনি আরও বলেন, দেলোয়ারের চক্র গুলিস্তানে সক্রিয়। আরিফুলের চক্র নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, আবুল মাতুব্বরের চক্র মোহাম্মদপুর ও ইমনের চক্র খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। তারা আইএমইআই পরিবর্তনের পাশাপাশি কখনো কখনো মোবাইলের ক্যাসিং, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। এসব ফোনের ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটিভেদে দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে। আর অন্য মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের মাধ্যমে বিক্রয় করে।
গ্রেফতার দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আরিফুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল আগেও র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। পরে তারা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে।