Logo
Logo
×

অপরাধ

ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৩৬ লাখ টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৯ পিএম

ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৩৬ লাখ টাকা

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে দুই ব্যক্তির হাত-পা বেঁধে ৩৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। সম্প্রতি রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স জব্দ করা হয়েছে। 

ডিবি জানায়, ডাকাতি করতে গিয়ে লুট করা টাকা দিয়ে এসব গাড়ি কিনেছে চক্রটি। আবার এসব গাড়ি দিয়েই ডাকাতি করত তারা। ডাকাতির অর্থ যাতে খরচ হয়ে না যায় কিংবা ধরা পড়লেও যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টাকা উদ্ধার করতে না পারে, তাই লুট করা টাকা বিনিয়োগ করা হয় গাড়ি কেনার পেছনে। 

গত বছরের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ থেকে ১০ লাখ টাকা তোলেন ইসরাত ফ্যাশনের এমডি জাকির হোসেন। গাড়িতে ছিল ৩ লাখ টাকা। আরও ২৩ লাখ টাকা তোলেন যমুনা ব্যাংকের সাব ব্রাঞ্চ থেকে। যৌথভাবে একটি জমি কেনার জন্য ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর ওপরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন তিনি। গাড়িতে থাকা ভাগনেসহ জাকিরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে তাদের পূর্বাচলে ফেলে চলে যায় ডাকাত দল। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাকির বলেন, দিনেরবেলায় কেউ পেছন থেকে ফলো করবে ভাবিনি। আমার সঙ্গে ভাগনে ছিল। একটি জমি যৌথভাবে কেনা ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর ওপরে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে ফলো করে আসা ঢাকাগামী একটি কালো রঙের গাড়ি আমাদের গতিরোধ করে। সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াকিটকি, পিস্তল হাতে গাড়ি থেকে আমাদের নামায়। নামার মাত্র ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আমাকেসহ ভাগনের হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে। আমাদের গাড়িতেই তারা আমাদের জিম্মি করে বিভিন্ন সড়ক ঘোরাতে থাকে। গাড়িতে কত টাকা আছে জানতে চায়। ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর বিকাল ৫টার দিকে পূর্বাচল বাণিজ্যমেলা সংলগ্ন সারুলিয়ায় রাস্তার পাশে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের ফেলে যায়। পরে স্থানীয়দের কথামতো এলাকার নাম জেনে নিজ এলাকায় যাই। এরপর ডেমরা থানায় মামলা করি।

মামলার পর ছায়াতদন্ত ও ডাকাত দলের সন্ধানে নেমে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি। 

মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তি বা কোনো নতুন গাড়ি এলে বা কেউ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলে, জমি বিক্রি করলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার লুণ্ঠনের অভিযোগ আসে। এরকমই একটি অভিযোগ করেন একজন ব্যবসায়ী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং কাশেমের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। এসব ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় একাধিকবার তারা জেলে গেছেন। 

গ্রেফতার দুজন সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন উল্লে­খ করে হারুন বলেন, টাকা বেশি আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ডাকাতির ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তারা কি করেছে? জিজ্ঞাসাবাদে ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তারা বলেছে, দুজনের নেতৃত্বে একটি ডাকাত দল দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। তারা ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাতির টাকা নষ্ট বা বণ্টন না করে বিনিয়োগ করে। তারা তিনটি গাড়ি কিনেছে, একটা মোটরসাইকেল কিনেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃ মাইক্রোবাস এবং পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা এলাকা থেকে ডাকাতির লুণ্ঠিত টাকায় কেনা একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। 

হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাতিকালে ব্যবসায়ী জাকিরকে কব্জা করে টাকা সব লুণ্ঠনের পর হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে। কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে বলে, তুমি যে অস্ত্রবাজ এ ছবি প্রকাশ করব। তুমিই হবে তখন অস্ত্রবাজ ডাকাত। পরবর্তীতে বাড়াবাড়ি করলে, তোদের অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। 

এর আগেও বিমানবন্দর ফ্লাইওভারের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, সেখান থেকেও আমরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে গ্রেফতার করেছিলাম। এ ধরনের ঘটনায় প্রথম কাজ হচ্ছে ডিবি পুলিশকে অবহিত করার আগে থানায় অবহিত করা, জিডি বা মামলা করা। তাহলে পুলিশের পক্ষে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতিতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম