অপহরণচক্রে গাড়িচালক, সতর্কবার্তা গোয়েন্দাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫২ পিএম
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর উত্তরা থেকে শেরপুর যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেল। দীর্ঘ এক মাস তাকে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছিল একটি চক্র। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের দুর্গম পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয় হিমেলকে। গ্রেফতার করা হয় অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ ১২ জনকে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অপহরণের ঘটনায় তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে, এর মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যক্তিগত গাড়িচালক সামিদুল। এছাড়াও বিভিন্ন অপহরণ চক্রের সঙ্গে গাড়ি চালকদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ। আর তাই ব্যক্তিগত গাড়ি চালকদের বিষয়ে নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেছে ডিবি।
হারুন অর রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল অপহরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ডিবি লালবাগ বিভাগ তদন্ত করছিল। এই মামলার তদন্তে হিমেলের ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়। এই চালকই অপহরণের মূলহোতা।
ডিবি প্রধান বলেন, গাড়িচালক সামিদুলের লোভ জাগে তার স্যারের মতো নিজের একটি গাড়ি থাকবে। হিমেলের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ভাবনা থেকে তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।
ডিবি জানায়, সামিদুল প্রথমে তুরাগ এলাকার হানিফ বাবুর্চি নামের এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর পরবর্তী আলোচনা হয় ময়মনসিংহের দোবাউরা থানার ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের সঙ্গে। হিমেলকে অপহরণ করে তার বাসায় রাখার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে হিমেলকে অপহরণ করে তার বাসায় নেওয়া হয়। কিন্তু টাকা পেতে দেরি হওয়ায় মামুন গাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকায় হিমেলকে পাঠানো হয়। গাড়িতে করে হিমেলকে সীমান্ত একটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সামিদুল ও মালেক, মোবারক, মানিককে নিয়ে চলে যান। তখন থেকেই হিমেলের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরবর্তীতে ডিবি লালবাগ বিভাগ কাজ শুরু করে। তদন্তে নেমে ডিবি লালবাগ শরীয়তপুরের চর অঞ্চল থেকে মাসুদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে। মাসুদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ময়মনসিংহের দোবাউরা, নেত্রেকোনা, দুর্গাপুর এরপর তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে সোর্স নিয়োগ করা হয়। এই সোর্সের মাধ্যমে ডিবি জানতে পারে এই গ্র“পটা শুধু অপহরণ করে না তারা চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত। এরই মধ্যে তারা অপহরণের পর ভুক্তভোগীকে নির্যাতন শুরু করে। যার ছবি ও ভিডিও পাঠানো হতো হিমেলের মায়ের কাছে। সর্বশেষ তারা ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিল।
হারুন বলেন, ওপারের মেঘালয় পুলিশ ও এপাড়ে আমাদের তৎপরতার ফলে এক মাস পাহাড়ে থাকায় টাকা শেষ হয়ে গেছিলো তাদের। এই সময়ে তারা টাকার জোগান দিতে গরু চুরি করে বিক্রি করে। এরপর সেই টাকা দিয়ে পাহাড়ে অবস্থান করে। পরে আমরা খবর পেলাম অপহরণকারীরা টাঙ্গুয়ার হাওড়ে আবারও অন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে। এমন খবর পেয়ে টাঙ্গুয়ার হাওড়ের একটি নৌকা থেকে হিমেলের গাড়িচালক সামিদুল, ১৭ মামলার আসামি মালেকসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই অভিযানে র্যাবও সহযোগিতা করেছে।
গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, এই ঘটনায় মামুন ও হানিফ এই ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আমাদের কাছে তারা একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
গাড়িচালকরা অহরণের চক্রের হয়ে কাজ করছে উলেখ করে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা বলব যারা ব্যক্তিগত গাড়িচালক নিয়োগ করেন, নিয়োগ করার আগে সতর্ক হতে হবে। কারণ এই ঘটনায় আমরা সামিদুলের মাধ্যমে দেখেছি তার মতো বহু চালক এসব অপহরণ চক্র ও সন্ত্রাসীদের কাছে তথ্য দিয়ে থাকে।