আরবি পড়াতে গিয়ে ছাত্রীকে ‘মৌখিক বিয়ে’, পরিবার না মানায় খুন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ১০:২০ পিএম
র্যাবের হাতে গ্রেফতার গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরে বাসায় ঢুকে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে (২১) হত্যার ঘটনায় সাইদুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে তিনি জানিয়েছেন, ২০২০ সালে করোনার সময় ওই ছাত্রীর পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত রাবেয়াদের বাসায় যাওয়া-আসা করতেন।
রাবেয়াদের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি রাবেয়াকে ‘মৌখিক বিয়ে’ করেন। সেই ‘বিয়ের’ সামাজিক স্বীকৃতির জন্য রাবেয়ার পরিবারকে তিন বছর ধরে চাপ দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে রাবেয়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাসায় ঢুকে রাবেয়াকে কুপিয়ে হত্যা করেন সাইদুল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে। রাবেয়াকে হত্যার পর সাইদুল চুল-দাড়ি কেটে চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সাইদুল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার মহেশতারা গ্রামের বাসিন্দা। চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাশ করেন। এরপর তিনি গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন। রাবেয়ার দুই বোনকেও আরবি পড়াতেন তিনি।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত রোববার বিকেলে স্থানীয় বাজারের কামারের দোকান থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি সংগ্রহ করেন সাইদুল। পরদিন সন্ধ্যায় সেই ছুরি নিয়ে রাবেয়াদের বাসায় গিয়ে সরাসরি তার রুমে ঢুকে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি দিয়ে রাবেয়ার মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে এলোপাতাড়ি জখম করেন। এ সময় রাবেয়ার চিৎকারে তার মা ও দুই বোন এগিয়ে এলে তাদেরও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান তিনি। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাবেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। আর রাবেয়ার মাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় রাবেয়ার বাবা আবদুর রউফ বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
তিনি জানান, রাবেয়া ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর গাজীপুরের চৌরাস্তায় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন।