গুলশানে ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১৭ এএম
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবদুল ওয়াহিদ মিন্টু।ছবি: সংগৃহীত
অর্থ লেনদেনের ঘটনা ঘিরে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বরের কাছে গ্লোরিয়া জিন্স কফি শপের সামনে ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পথচারী এবং এক রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবদুল ওয়াহিদ মিন্টু (৪৬) গুলি চালিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার লাইসেন্স করা পিস্তলটিও জব্দ করা হয়েছে।এ ঘটনায় মিন্টুসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুলশান সিটি মার্কেটের একটি বিকাশের দোকানে ঘটনার সূত্রপাত্র বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ দুজনকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আটক আবদুল ওয়াহিদ মিন্টু ছাড়া অপর চারজন হলেন- ওমান প্রবাসী মো. আরিফ হোসেন (২৪), মনির আহমেদ (৩৫), দোকানদার হাবিবুর রহমান আলিম (৩৫) ও দোকানদারের সহকারী মো. খলিল খান (১৮)। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি, ৩টি গুলির খোসা, ৪টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পথচারী মো. আমিনুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ) ও ভ্যানচালক আব্দুর রহিম মিয়া (৫০)। রহিম মিয়া বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে পুলিশ সূত্র জানায়, ওমান প্রবাসী মো. আরিফ হোসেন বিকাশ প্রতারণার শিকার হন। এরপর মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় গুলশানের আলফা জেনারেল স্টোরে (বি ২৭, রোড-১১, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২) গিয়ে দোকানদারের মাধ্যমে একটি নাম্বারে পর্যায়ক্রমে ৭৫ হাজার টাকা পাঠান। ওই টাকা নগদ পরিশোধ করতে না পারায় দোকানদার হাবিবুর রহমান আলিম (৩৫) মো. আরিফ হোসেনকে তার দোকানে আটকে রাখেন। পরে মো. আরিফ হোসেনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তার ভগ্নিপতি মনির হোসেন (৩৫) ও ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ গ্লোরিয়া জিন্স কফি শপে আসেন। সেখানে দোকানদার এবং তার লোকজন তাদেরও আটক করেন। একপর্যায়ে নিজেকে রক্ষার জন্য গুলি ছোড়েন মিন্টু। এ সময় একজন পথচারী ও একজন রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হন ।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ বলেন, এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিরোধের জেরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলির ঘটনার আগে দুপক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক ব্যক্তি হঠাৎ করেই সেখানে ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্র উঁচিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ঝামেলা দেখে সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে এগোন। তখন সে (মিন্টু) এলোপাতাড়ি গুলি করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, যেই অস্ত্রটি দিয়ে গুলি করা হয় সেটি লাইসেন্স করা। ২০২৪ পর্যন্ত এর মেয়াদ আছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদ হাসান নামের একজন জানান, ঘটনার সময় তারা গ্লোরিয়া জিন্স কফি শপের ভেতরে ছিলেন। বিকাল ৪টা ৫ মিনিটের দিকে প্রথম গুলির আওয়াজ শুনতে পান। এতে ভেতরে থাকা সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তারা সিট থেকে উঠে যান। এসে দেখেন কফি শপটির প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে গ্লাসের ভেতর থেকে দেখেন লাল টি-শার্ট ও জিন্স পরিহিত একজন ছোট সাইজের একটি অস্ত্র উঁচিয়ে মূল সড়ক ও শপটির মধ্যবর্তী পার্কিংয়ের ফাঁকা স্থানে হাঁটাচলা করছেন। ততক্ষণে মূল সড়কে অগণিত মানুষের ভিড় জমে যায়। কেউ কেউ তাকে ধরারও চেষ্টা করেন। এ পর্যায়ে তিনি উপরে তাক করে আরও চার রাউন্ড গুলি করেন। কেউ সেখানে গেলে তাকেও গুলি করার হুমকি দেন।
এই প্রত্যক্ষদর্শী আরও জানান, যখন বাইরে এসব চলছিল তখন ভেতর থেকে এক ব্যক্তি ৪টা ৮ মিনিটে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন। খবর পেয়ে ৩-৪ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য এসে উপস্থিত হন। এ সময় তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হলে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। এরপর পুলিশ সদস্যরা কফি শপের ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখানে কারো কাছে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা- জানতে চাওয়া হয়। এরমধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে গুলি করা ব্যক্তিকে নিয়েই পুলিশ স্থান ত্যাগ করে।