বয়স ৪০ ছুঁয়েছে। আর কত। এই বয়সে সবাই ব্যাট-প্যাড গুছিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী এখনো যেন মাঠ মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। সত্যি বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচে মহাকাব্যিক ৮৪ রানের এক ইনিংস খেলে জানান দেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি।
আগামী ফেব্রুয়ারি–মার্চে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় ৪০ পেরিয়ে যাবে এ অলরাউন্ডারের। সেই টুর্নামেন্ট খেলেই ওয়ানডেকে বিদায় জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন মোহাম্মদ নবী। গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) পোস্ট করা একটি ভিডিওতে নবী নিজেই এ ঘোষণা দেন। পরে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এসিবির প্রধান নির্বাহী নসিব খান।
এর আগে ২০০৯ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় মোহাম্মদ নবীর। আফগান ক্রিকেটের বেড়ে ওঠা ও অনেক উত্থান–পতনের সাক্ষী এ অলরাউন্ডার ১৫ বছরে খেলেছেন ১৬৫ ওয়ানডে, করেছেন ৩৫৪৯ রান, নিয়েছেন ১৭১ উইকেট। এই সংস্করণে আফগানিস্তানের শীর্ষ রান সংগ্রাহক ও শীর্ষ উইকেটশিকারি—দুই তালিকাতেই তার অবস্থান দুইয়ে।
শারজায় গত বুধবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের ৯২ রানের জয়েও বড় অবদান রাখেন নবী। ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করার পথে খেলেছেন ৭৯ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। এরপর নিয়েছেন নাজমুল হোসেনের উইকেট। বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য পতনের শুরু সেখান থেকেই।
ওয়ানডে থেকে নবীর অবসরের খবর নিশ্চিত করে ক্রিকবাজকে নসিব খান বলেন, হ্যাঁ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর নবী ওয়ানডে থেকে অবসরে যাবে। বোর্ডকে সে তার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে। আমাকেও কয়েক মাস আগে জানিয়েছে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর সে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষ করতে চায়। আমরা ওর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে এই সংস্করণকে বিদায় জানান নবী। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে অবসরে যাবেন ওয়ানডে থেকেও। তবে আফগানিস্তানের হয়ে টি–টোয়েন্টি খেলে যাবেন মোহাম্মদ নবী। খুব সম্ভবত ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে এই সংস্করণকেও বিদায় জানাবেন—এমনটিই মনে করছেন নসিব খান। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর সে টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এখন পর্যন্ত এটাই তার পরিকল্পনা।
আফগানিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাস অনেকেরই জানা। একটু বয়স্ক কেউ কেউ চোখের সামনে সবকিছু দেখেছেন আর নবী সেই ইতিহাসই খেলতে খেলতে দেখেছেন। আধুনিক যুগের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো একক খেলোয়াড় তার দেশকে এভাবে এগিয়ে নিতে পারেননি। যেমনটি আফগানিস্তানের জন্য নবী করেছেন—এমন মনে করেন অনেকেই। সবচেয়ে বেশি ৪৫ দলের বিপক্ষে জয়ের বিশ্বরেকর্ডটা তারই দখলে।
এদিকে নবীর ছেলে হাসান এইশাখিলও পেশাদার ক্রিকেটার। এ বছর আফগানিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন এইশাখিল। সর্বশেষ গত আগস্টে খেলেছেন ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি লিগে। কে জানে বাবা–ছেলেকে ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একসঙ্গে খেলতেও দেখা যায় কিনা! নবী নিজেও ছেলের সঙ্গে আফগানিস্তানের হয়ে খেলার স্বপ্ন অনেক দিন ধরে দেখে আসছেন।