৮ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি, যে রেকর্ড নেই ব্র্যাডম্যানেরও
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
৮ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি, যে রেকর্ড নেই ব্র্যাডম্যানেরও
গত মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকের পর টানা চার ম্যাচে পাঁচ সেঞ্চুরি করেছিলেন অগ্নিদেব চোপড়া। যে রেকর্ড ডন ব্র্যাডম্যানেরও নেই। ২৫ বছরের এ তরুণ ব্যাটার মিজোরামের হয়ে এবারও ফর্মে। বাবা বিধু বিনোদ চোপড়ার সঙ্গে তার ছেলে অগ্নিদেব চোপড়া। পরপর দুটি ম্যাচে দ্বিশতরান। সব মিলিয়ে আট ম্যাচে সাত সেঞ্চুরি।
আনন্দবাজার অনলাইনের এক সাক্ষাৎকারে বুধবার (৩০ অক্টোবর) কথা বলেছেন বলিউডের চিত্রপরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়ার ছেলে অগ্নিদেব চোপড়া । মিজোরামকে তৃতীয় ম্যাচ জিতিয়ে এখন তিনি মুম্বাইয়ে। সেখান থেকেই ফোনে জানালেন— এবার লক্ষ্য আইপিএলের গ্রহে ঢুকে পড়া।
‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘টুয়েল্ভথ ফেল’-এর মতো সিনেমা যিনি উপহার দিয়েছেন, তার ছেলের তেমন উৎসাহ নেই রুপালি পর্দায়। তার ধ্যান-জ্ঞান শুধুই ক্রিকেট।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আট ম্যাচ খেলেছেন অগ্নিদেব। ১৬ ইনিংসের সাতটিতে শতরান। অর্ধশতরান চারটি। গড় ৯১.১৩। অভিষেকের পর থেকে টানা চারটি ম্যাচে শতরানের নজির আর কারও নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। ক্রিকেটের পরিসংখ্যান নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তারা জানিয়েছেন—এটি বিশ্বরেকর্ড।
বিধু বিনোদের পরিচালনায় ‘টুয়েল্ভথ ফেল’ সিনেমা আলোড়ন ফেলেছিল। বহু মানুষ প্রশংসা করেছিলেন সেই সিনেমার। বাবার সেই ছবি মুক্তির পরেই অভিষেক ম্যাচে অগ্নিদেবের শতরানের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। তার পর বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। সেই কথা প্রথম জানিয়েছিলেন অগ্নিদেবের মা— চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়া।
অগ্নিদেবের জন্ম আমেরিকায়। তার বাবা ‘থ্রি ইডিয়েটস’, ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’, ‘পিকে’, ‘সঞ্জু’র প্রযোজক। সেই সঙ্গে ‘খামোশ’, ‘১৯৪২: আ লভ স্টোরি’, ‘টুয়েল্ভথ ফেল’এর পরিচালক। মা-ও যেখানে চলচ্চিত্র সমালোচক, তাদের ছেলে হয়ে অগ্নিদেব ক্রিকেটকে নিজের জীবিকা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। সেটি কাকাকে দেখে। আনন্দবাজার অনলাইনকে অগ্নি বললেন, মনে হয় বীর পাপার (বিধু বিনোদ চোপড়ার ভাই) থেকে ক্রিকেট খেলার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তিনি আমার কাকু। কাশ্মীরে বড় হয়েছেন তিনি। তার ক্রিকেটে আগ্রহ ছিল। তিনি জম্মু-কাশ্মীরের হয়ে খেলেছেন। উত্তরাঞ্চলের হয়ে খেলেছেন। বিষেণ সিং বেদীর বিরুদ্ধে খেলেছেন। বাবার কাছে গল্প শুনেছি। বীর পাপার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কথা হতো। আমার পরিবারে একমাত্র তিনিই ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কয়েক বছর আগে কোভিডের সময়ে তিনি মারা গেছেন।
অগ্নিদেব একেবারেই সিনেমাপ্রেমী নন। তাই খুব একটা সিনেমা দেখেনও না। অগ্নি বললেন, সিনেমা দেখতে ভালো লাগে। তবে খুব একটা হলে যাওয়া হয় না। বাড়ি বসেই দেখি মাঝে মাঝে। আমি সিনেমা খুব যে ভালোবাসি তেমনটি নয়।
তবে বাবার একটি সিনেমা খুব পছন্দ অগ্নির— ‘থ্রি ইডিয়েটস’। অনেক বার দেখেছেন। অগ্নি বললেন, থ্রি ইডিয়েটস আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমি অনেকবার দেখেছি সিনেমাটা। অনেক সময় ওই ছবির কোনো কোনো মজার দৃশ্যগুলো দেখি।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অগ্নিকে মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে নিয়ে গিয়েছিলেন তার মা। সেই শুরু ব্যাট ধরা। এর পর সাত বছর বয়সে এমআইজি ক্রিকেট ক্লাবে তাকে নিয়ে যান বিধু। সেখানে ছোট্ট অগ্নিকে দেখে কোচ বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি ক্রিকেট শিখতে এসেছেন। কোচ বলেছিলেন— তোমার দাদা কোথায়? বিধু তখন বলেছিলেন—ওর কোনো দাদা নেই। ও-ই ক্রিকেট শিখবে। ছোট্ট অগ্নিকে নিতে রাজি ছিলেন না কোচ। কিন্তু নাছোড় অগ্নি কোচকে রাজি করানোর জন্য ক্লাবের মাঠে দৌড়াতে শুরু করেন। দুই পাক দৌড়ানোর পর কোচ রাজি হন তাকে নিতে। অগ্নি বললেন, সেখান থেকেই আমার ক্রিকেট জীবন শুরু।
মুম্বাইয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলেছেন। কিন্তু সরফরাজ খান, শ্রেয়াস আয়ার, মুশির খানদের টপকে মুম্বাই দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। সে কারণেই মুম্বাই ছেড়ে ক্রিকেট খেলতে মিজোরাম চলে গেছেন। বেঙ্গালুরুতে গত বছর ট্রায়াল নিতে এসেছিল মিজোরাম। সেখানে অগ্নিকে দলে নেওয়ার কথা ভাবে মিজোরাম ক্রিকেট সংস্থা।
গত মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে প্রথম ম্যাচে সিকিমের বিপক্ষে ১৬৬ রান করেছিলেন অগ্নি। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৯২। দ্বিতীয় ম্যাচে নাগাল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৬৬ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রান করেছিলেন। তৃতীয় ম্যাচে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১১৪ ও ১০ রান করেছিলেন তিনি। তবে নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা দিয়েছিলেন মেঘালয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচে। দুই ইনিংসেই শতরান করেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১০৫ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১০১ রান করেছিলেন। যে রেকর্ড ব্র্যাডম্যানেরও নেই। যদিও এ তুলনা শুনে লজ্জায় পড়ে গেলেন অগ্নি। তিনি বললেন, ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে আমার তুলনা করাটাই সম্ভব নয়। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ব্যাটারদের একজন হচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওর গড় ৯৯.৯৪। উনি যে পর্যায় খেলেছেন, আমি তো সেটি খেলিনি। তাই ওর সঙ্গে আমার তুলনাটা খুবই হাস্যকর লাগে আমার।
রঞ্জির প্লেট গ্রুপে আলোচনার কেন্দ্রে এখন অগ্নিই। অনেকেই বলছেন— প্লেট গ্রুপে থাকা দুর্বল দলের বিপক্ষে রান করেছেন তিনি। যে কথায় কান দিতে নারাজ অগ্নি। তিনি বলেন, লোকেরা অনেক কথাই বলবে। কিন্তু দিনের শেষে আমি পারফর্ম করছি এবং এই প্লেট গ্রুপে খেলা অনেক ক্রিকেটারই সেটা করতে পারছে না। সবাই তো একই মানের বোলারের বিপক্ষে খেলছে। আমি বাস্তববাদী। আমার লক্ষ্য এখন একটাই— মিজোরামকে এলিট গ্রুপে তোলা। সেখানে খেললে কেউ বোলারের মান নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। সেখানে আমি মিজোরামের হয়েই খেলতে চাই। মিজোরাম এলিট গ্রুপে না উঠলে তিনি অন্য কোনো দলের হয়ে খেলতে চাইবেন? অগ্নি বললেন, আপাতত মিজোরামের হয়ে এই মৌসুমে খেলা নিয়েই ভাবছি। বেশি দূরের কথা ভাবছি না।
সামনেই আইপিএলের নিলাম। ভারতের বহু ঘরোয়া ক্রিকেটার সেখানে নাম লেখাবেন। গতবারের মতো অগ্নি এবারেও নাম লিখিয়েছেন। নিজের যোগ্যতায় সেই লিগে সুযোগ পেতে চান তিনি। তবে অগ্নি বললেন, হয়তো আমি এখনো সেই পর্যায়ে খেলতে পারিনি, তাই আইপিএলে সুযোগ পাইনি। নিজের যোগ্যতায় সুযোগ পেতে চাই। খ্যাতনামা বাবার সাহায্য এ ক্ষেত্রে একেবারেই চান না। তিনি বলেন, আমার বাবা কখনো কাউকে ফোন করে বলবে না আমাকে দলে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমাকে ভালো খেলতে হবে, যাতে আমার বাবাকে ফোন করে লোকে বলে দলে নেওয়ার কথা। যদি বাবার কারণে কেউ আমাকে দলে নেয়, তা হলে প্রথম একাদশে সুযোগ পাব না। আমি এমন কোনো দলে থাকতে চাই না, যারা আমাকে নিয়ে বসিয়ে রাখবে।
কোন দলের হয়ে খেলতে চাইবেন আইপিএলে? উত্তরে অগ্নি বললেন, দর্শক হিসাবে আমার প্রিয় দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। যেহেতু আমি মুম্বাইয়ের ছেলে, তাই মুম্বাইকেই সমর্থন করি। কিন্তু আইপিএলে সুযোগ পেলে যে দল নেবে, তাদের হয়েই নিজের সেরাটা দেব।
এবারের রঞ্জিতে সিকিমের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন অগ্নি। তবে সেই ম্যাচ জিততে পারেনি মিজোরাম। দ্বিতীয় ম্যাচে অরুণাচলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে শতরানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিশতরান করেন অগ্নি। সেই ম্যাচ জিতে নেয় মিজোরাম। তৃতীয় ম্যাচেও দ্বিশতরান করেন অগ্নি। তার ২১৮ রানের ওপর ভর করেই মণিপুরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৩৬ রান তোলে মিজোরাম। পর পর দুটি ইনিংসে দ্বিশতরান করে আবার চর্চায় অগ্নি। মুম্বাইয়ে জায়গা না পাওয়া ‘টুয়েল্ভথ ফেল’ অগ্নি এখন সাফল্যের শিখরে।