করোনা টিকার দুই কারিগর পেলেন চিকিৎসায় নোবেল

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির পথ দেখিয়ে চিকিৎসায় নোবেল জিতলেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন-ক্যাটালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইজম্যান। সোমবার নোবেল কমিটি তাদের নাম ঘোষণা করে। ক্যাটালিন ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি সিজড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ওয়েইজম্যানের জন্ম ১৯৫৯ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস। তিনি আমেরিকার পেন ইনস্টিটিউট ফর আরএনএ ইনোভেশনে কাজ করেন।
করোনা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম ‘এমআরএনএ’। মডার্না ও ফাইজার/বায়োএনটেকের করোনার টিকা এই প্রযুক্তিতে তৈরি। প্রথাগত টিকাগুলো রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মৃত বা দুর্বল অংশ দিয়ে তৈরি। কিন্তু এমআরএনএ প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের প্রোটিন, যা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহের সহজাত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এই এমআরএনএ প্রযুক্তিকে কার্যকর করতে মানবকোষের প্রধান অংশ নিউক্লিয়াসের অনুপুঙ্খ গবেষণা জরুরি ছিল। এই দুই বিজ্ঞানী সেই কাজটিই করেছেন। তাদের ‘নিউক্লিওসাইড বেইজড মডিফিকেশন’ গবেষণার সাফল্যই এমআরএনএ করোনা টিকা তৈরির পথ সুগম করে।
নোবেল পুরস্কার কমিটি বলেছে, বর্তমান সময়ে মানবস্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বড় হুমকির সময় এই দুই পুরস্কার বিজয়ী টিকা তৈরির ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য রকম অবদান রেখেছেন। এ টিকা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে। এছাড়া একই ধরনের এমআরএনএ প্রযুক্তি ক্যানসারসহ অন্য নানা রোগের টিকা আবিষ্কারের গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে।
ক্যারিকো ও ওয়েইজম্যান ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সটি অব পেনসিলভানিয়ায় প্রথম একত্রে কাজ করতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করেন। হাঙ্গেরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ করতেন ক্যারিকো। সেখানে চাকরি হারালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি।
পুরস্কার জয়ের পর ওয়েইজম্যান বলেন, আমি ক্যারিকোর কাছে প্রথম পুরস্কারের খবরটি পাই, তাকেই প্রথম জুরি থেকে ফোন করা হয়েছিল। তবে আমাদের তা বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমরা ভাবছিলাম কেউ আমাদের সঙ্গে প্রাঙ্ক (কৌতুক) করছে কিনা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হলো নোবেল পুরস্কার ২০২৩। প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। আজ পদার্থে, কাল রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর বৃহস্পতিবার সাহিত্যে ও শুক্রবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। দুদিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতির নোবেল। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়।
নোবেল পুরস্কার সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে এবং তার রেখে যাওয়া অর্থে দেওয়া হয়। নোবেল ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তিতে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। পরে ১৯৬৮ সাল থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতি।
প্রতি বছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবস ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের একটি করে সনদ ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এ বছর থেকে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৮৯ হাজার মার্কিন ডলার বাড়িয়ে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ডলার করা হয়েছে (১১ লাখ ক্রোনা)।