করোনা পরিস্থিতিতেও বসে নেই দিনাজপুরের ৪ লাখ ৮০ হাজার কৃষক
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৯:৪০ এএম
‘করোনা পরিস্থিতি চলিলেও হামাক তো আর বসি থাকিলে চলিবে নায়। হামেরা বসি থাকিলে খামো কি? আর দেশের মানুষেই বা খাবে কি? এই তানে হামাক আবাদ করিবায় হবে। তাহালে হামরাও ভালো থাকিমো, আর দেশের মানুষেরও অন্তত খাবারের অভাব হবে নায়।’
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল কৃষক মো. মতিউর রহমান মঙ্গলবার আমন রোপণ শুরু করার পর এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন যুগান্তরের কাছে।
তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ধানের দাম না পেলেও এবার বোরো ধানের ভালো দাম পেয়ে লাভবান হয়েছেন। আর তাই বোরো আবাদের পর এখন পুরো উদ্যমে শুরু করেছেন আমন আবাদ। এবার ৬০ একর জমিতে আমন আবাদ করবেন বলে জানান তিনি।
শুধু মতিউর রহমানই নয়, বৈশ্বিক করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে প্রায় সবকিছু থমকে গেলেও বসে নেই ধানের জেলা দিনাজপুরের ৪ লাখ ৮০ হাজার কৃষক পরিবার। বোরো ধান ও ভুট্টা আবাদের পর এখন আমন আবাদ নিয়ে ব্যস্ত তারা। বীজতলা তৈরির পর ইতিমধ্যেই আমন ধান রোপণ করতে শুরু করেছেন ধানের জেলার এই কৃষকরা। আর ধান আবাদ করে বেশ কয়েক বছর ধরেই লোকসান গোনার পর এবার দাম ভালো থাকায় বোরো ধান আবাদ করে লাভবান হওয়ায় বেশ উৎসাহের সঙ্গেই আমন আবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা।
করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেরই কাজ না থাকায়, আবার অনেকেই বেকার জীবনযাপন করলেও দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা আমন আবাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু একপ্রকার থমকে গেলেও গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, যেন এমন কোনো পরিস্থিতিই নেই। স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত আমন বীজতলা তৈরি নিয়ে, আবার কেউ ব্যস্ত আমন চারা রোপণ নিয়ে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, ধান আবাদ করে বেশ কয়েক বছর ধরেই লোকসান গোনার পর এবার ভালো দাম থাকায় বারো ধান আবাদ করে তারা বেশ লাভবান হয়েছেন। ফসল আবাদ করে এভাবে ন্যায্য দাম পেলে তারাও লাভবান হবে এবং দেশও খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে না বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল জানান, প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে গত বছরের তুলনায় দিনাজপুরে এবার বেশি পরিমাণ জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলায় গত বছর ২ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হলেও এবার ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলায় ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এই বীজতলা দিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা যাবে। বন্যার আশংকায় বেশি পরিমাণ বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যেই দিনাজপুর জেলায় আমন রোপণ শুরু করেছে কৃষকরা। এ পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, কৃষকরা এবার বোরো ধানের দাম ভালো পাওয়ায় আমন আবাদে আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছেন।