Logo
Logo
×

কোভিড-১৯

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও এন্টিবডি টেস্ট নিয়ে কিছু কথা

Icon

ডা. আশরাফুল হক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫৫ পিএম

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও এন্টিবডি টেস্ট নিয়ে কিছু কথা

শ্বাসনালীতে যেসব ভাইরাস সংক্রমণ হয় অনেকটা সেভাবেই সংক্রমণ হচ্ছে করোনাভাইরাস দিয়ে। যেহেতু এর চিকিৎসা এখনও চূড়ান্ত রূপে নির্ধারিত হয়নি তাই শঙ্কা কাজ করে আক্রান্ত হলে বাঁচামরা নিয়ে। লক্ষণ প্রকাশ না করেও অনেকেই এটি ছড়াচ্ছেন বলেই ভয়টা আরও বেশি।

সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে বেছে নিতে হয়েছে লকডাউনের মত পদক্ষেপ। কতদিন চলবে এই লকডাউন?

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রকাশ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এটি প্রয়োগ করলে ৪৯তম দিনের দিকে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আবার লকডাউনের বিকল্প নেই। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এটি করতে বাধ্য হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এটি থেকে বের হয়ে আসবে সেই নিয়েও তারা কাজ শুরু করেছে।

যখন কোনও সমাজে ছোঁয়াচে রোগের আবির্ভাব হয় তখন প্রাকৃতিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে নির্দিষ্ট জনসংখ্যাকে আক্রান্ত হতে হয়। হিসাবটা প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি।

আবার করোনার উপাত্ত বলে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ মৃত্যুবরণ করতে পারে। সেই হিসাবে আমাদের জন্য সেটি অনেক অনেক বেশি হয়ে যায় সংখ্যাটা। আর প্রিয়জন হারাতে কে চাই আমরা?

এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে জার্মানি, ইতালি যেটি শুরু করছে তা হলো – Immunity passport. কোনও স্থান ভ্রমণ করতে গেলে যেমন পাসপোর্ট লাগে তেমনি করোনা পরবর্তী সমাজে বিচরণের জন্য প্রয়োজন পাসপোর্ট। কারণ ব্যক্তিটি যেন কারও ক্ষতির কারণ না হয় তার জন্য যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন। কিভাবে করা যায় সেটি?

এন্টিবডি কী?

শরীরে যখন কোনও জীবাণু ঢুকে তখন শরীরের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে। সেটিকে নষ্ট করার জন্য যেটি তৈরি হয় তার নাম এন্টিবডি। প্রথম যে এন্টিবডি তৈরি হয় তার নাম IgM. করোনার ক্ষেত্রে সেটি রক্তে পাওয়া যায় ৭ম দিন থেকে। এরপর আসে IgG যা মূলত শরীরের বাকি প্রতিরক্ষার কাজ করে।

PCR দিয়ে কেউ আক্রান্ত কিনা বুঝা যায় আর এন্টিবডি দিয়ে বুঝা যায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন কিনা।

আর একবার ক্ষমতা তৈরি হলে সাধারণত তিনি আরেকজনের জন্য ক্ষতির কারণ হন না।

এন্টিবডি টেস্ট নিয়ে কিছু কথা

এন্টিবডি টেস্ট যেহেতু ২০ মিনিটের কম সময়ে করা সম্ভব তাই অনেকজনকে টেস্ট করাটাও সহজ। এটাও ঠিক যেকোনো টেস্টের মত এতেও ত্রুটি থেকে যেতে পারে, তবে তার হার পরীক্ষিত ডিভাইসে সর্বনিম্নই থাকে সাধারণত।

যিনি এন্টিবডি টেস্টে পজিটিভ আসবেন তিনি Immunity Passport পাবেন। তাহলে তিনি তার গতানুগতিক কাজ করার সার্টিফিকেট পেলেন। এভাবে একে একে অনেকের অংশগ্রহণে অর্থনীতির চাকা চালু হবে।

স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যাদের রেজাল্ট পজিটিভ আসবে তারা অনেকটা নির্ভারভাবে করোনা রোগীর সেবায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আর বাকিদের কাজে লাগানো যেতে পারে অন্য রোগীদের সেবায়। তাহলে কোনও রোগীর চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটবে না।

দক্ষিণ কোরিয়া একেবারে প্রথম থেকেই এন্টিবডি টেস্টের দিকে মনোযোগ দিয়েছিল বলে তাদের লকডাউনে যেতে হয়নি তেমনভাবে। আমাদের দেশে এখন অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে যাদের লক্ষণ করোনা আক্রান্তদের মত।

পিসিআরের রেজাল্ট কি নির্ভুল?

পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে আসতে অনেকেই তার সংস্পর্শে এসে কোয়ারেন্টিনে যাওয়া লাগছে। আবার অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন এরই মাঝে। PCR এর রেজাল্ট যে করোনার ক্ষেত্রে শতভাগ নির্ভুল তা কিন্তু নয়। পরীক্ষার করার স্যাম্পল কথা থেকে কিভাবে নেওয়া হয়েছে, কিভাবে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয়েছে ইত্যাদির ওপরও নির্ভর করে রেজাল্ট। তাই আমেরিকার মত দেশেও এখন এন্টিবডি টেস্ট যাতে IgM+IgG দেখা যায় সাথে CT scan দিয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ চলছে। সময় যেমন বেঁচে যায় সঙ্গে অনেকের কোয়ারেন্টিনে যাওয়া থেকো রক্ষা হচ্ছে।

গণস্বাস্থ্য থেকে আসার কথা এমনই একটি ডিভাইস, তবে তা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। উন্নত দেশে যেসব ডিভাইস চলছে তা আনার ব্যবস্থা করে প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করে তাদের মত অর্থনীতির চাকা চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়তো সবার জন্যই উপকার হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম