করোনা পরীক্ষা, ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়ানোর পরও এ ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য যথেষ্টভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে বিশ্বের বহুদেশ থেকে নানা অভিযোগ রয়েছে।
চীনের হুবেইপ্রদেশের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসের সূত্রপাত। সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া সেখানে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দ্রুত সাধারণ মানুষের শরীরে পরীক্ষা চালিয়েছে।
এ ছাড়া ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পরীক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে জার্মানি। ব্রিটেনের সরকার যতসংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি। আর বাংলাদেশ ও ভারতেও যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
কীভাবে পরীক্ষা করা হয়?
হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার জন্য নাক ও গলার ভেতর থেকে নমুনা নেয়া হচ্ছে। তার পর সেই নমুনা পাঠানো হচ্ছে গবেষণাগারে দেখার জন্য। সেখান থেকে পরীক্ষার ফল জানতে কয়েক দিন সময় লাগছে।
এ ছাড়া ব্রিটিশ সরকার আরও একটি পরীক্ষা শুরু করতে আগ্রহী। সেটি হলো অ্যান্টিবডি পরীক্ষা।
এই পরীক্ষায় দেখা হবে কারও শরীরে ইতিমধ্যে এ ভাইরাস রয়েছে কিনা। অর্থাৎ দেখা হবে কারও শরীরে এই রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা। একটি যন্ত্রের মধ্যে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে এই পরীক্ষা চালানো হয়। এই পরীক্ষার ফল জানা যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।
পরীক্ষা কতটা নির্ভরযোগ্য
বিবিসির স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদদাতা রেচেল স্ক্রেরিয়ার বলছেন, হাসপাতালগুলোতে যেসব পরীক্ষা চালানো হচ্ছে, সেগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য।
তবে এর মানে এই নয় যে, এই পরীক্ষা থেকে করোনাভাইরাসের প্রত্যেকটি কেস ধরা পড়বে। কোনো রোগীর যদি সংক্রমণ ঘটার একেবারে গোড়ার দিকে নেয়া হয়ে থাকে, অথবা যদি
কারও সংক্রমণের মাত্রা খুব কম থাকে, তা হলে তার পরীক্ষার ফল 'নেগেটিভ' আসতে পারে।
এ ছাড়া গলার ভেতর থেকে নমুনা নেয়ার সময় যদি ওই লালায় যথেষ্ট পরিমাণ ভাইরাস না থাকে, তা হলেও পরীক্ষার ফল 'নেগেটিভ' আসতে পারে।
এখনও পর্যন্ত অ্যান্টিবডি পরীক্ষাকে খুব নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যে পরীক্ষাগুলো আছে, তার মধ্যে ১৫টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কিন্তু এর কোনোটাই তারা খুব নির্ভরযোগ্য মনে করছেন না।
অধ্যাপক জন নিউটন ব্রিটেনে এই ভাইরাসটির পরীক্ষার বিষয়টি সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি দ্য টাইমস সংবাদপত্রকে বলেন, চীন থেকে যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিটগুলো
কেনা হয়েছে, তাতে যেসব রোগী করোনাভাইরাসে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের শরীরে পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। কিন্তু যাদের মধ্যে অল্প উপসর্গ দেখা গেছে তাদের ক্ষেত্রে এ পরীক্ষায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পরীক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।
১. প্রথমত কে আক্রান্ত সেটি নির্ণয় করা এবং দেখা যে ভাইরাস কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।
২. ভাইরাসে কোন দেশে কত ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে তা জানা যাবে। ফলে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই মহামারী সামাল দিতে কতটা প্রস্তুত ও হাসপাতালগুলোর ওপর নিবিড় পরিচর্যা ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হলে কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন সে বিষয়ে দেশগুলো যথাযথ পরিকল্পনা করতে পারবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা