Logo
Logo
×

সারাদেশ

মানুষের মায়া-মমতা চান পাহাড়ি নারী দয়াবতী

Icon

সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম

মানুষের মায়া-মমতা চান পাহাড়ি নারী দয়াবতী

দয়াবতী তঞ্চঙ্গ্যা। জন্ম ১৯৫৬ সালে। বর্তমান বয়স প্রায় ৭০ বছরের কাছাকাছি। তিনি বর্তমানে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডের ১৩১নং বল্লালছড়া মৌজার তিনকুনিয়া নামক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা।

সেখানে দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে একাকিত্ব মানবেতর জীবন কাটছে অসহায় এ বৃদ্ধার। লড়ে যাচ্ছেন জীবনযুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে দয়াবতীর আপনজন বলতে কেউ নেই। নেই নিজের কোনো জায়গা। পরের জায়গায় একটি জীর্ণশীর্ণ বাঁশের মাচাঘরে থাকেন। সেটিও করে দিয়েছেন গ্রামের লোকজন। স্থানীয় হেডম্যানের (মৌজাপ্রধান) দেওয়া জায়গায় করে দেওয়া হয়েছে ঘরটি। যতটুকু সম্ভব দয়াবতীর দেখভাল করেন হেডম্যান তরুণ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।

মানুষের দিনমজুরি করে দিন চলত দয়াবতীর। কিন্তু বর্তমানে জোর নেই শরীরে। দিন দিন ন্যুব্জ হয়ে পড়ছেন। এখন সম্বল শুধু বয়স্ক ভাতা। দয়াবতীর সামনে শুধু অন্ধকার। চান মানুষের মায়া-মমতা, প্রশাসনের সহায়তা।

দয়াবতী বলেন, ২৫ বছর আগে জটিল রোগে মারা গেছেন আমার স্বামী নজু তঞ্চঙ্গ্যা। ছিলাম নিঃসন্তান দম্পতি। নেই কোনো ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন। তাই আমাকে দেখার কেউ নেই। নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। পরের জায়গায় রয়েছি। বাঁশের কুঁড়েঘরটিও সমাজ তৈরি করে দিয়েছে। বর্তমানে সেটিও জীর্ণশীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন অক্ষম হয়ে পড়ছি। শরীর আর কাজ করতে পারে না। আপদে-বিপদে, সুখে-দুঃখে আমাদের তরুণ হেডম্যান আর সমাজ ছাড়া দেখার মতো কেউ নেই। আগে সরকারি আশ্রয়ণ ঘর চেয়েছিলাম। কিন্তু তা জোটেনি। সামান্যটুকু বয়স্ক ভাতা দিয়ে কিছুই হয় না। এখন সামনে শুধু অন্ধকার। মানুষের মায়া-মমতা ছাড়া চাওয়ারও কিছুই নেই। সরকারি সহায়তা পেলে সামনের অন্ধকার কেটে যেত।

১৩১নং বল্লালছড়া মৌজার হেডম্যান তরুণ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দয়াবতীর নিজস্ব বিন্দুমাত্র জায়গা-জমি নেই। আমার জায়গায় থাকার জন্য আশ্রয়স্থল করে দিয়েছি। আমি এবং সমাজ ছাড়া দেখার কেউ নেই। কুঁড়েঘরে বসবাস করছেন। যেদিন যা পেয়ে থাকেন তা দিয়ে খুশি থাকেন। তার বয়স অনেক হয়েছে। এখন কাজও করতে পারেন না। তাই মানুষের মায়া-মমতা ছাড়া দয়াবতীর অবলম্বন আর কিছুই নেই।

বিলাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল কান্তি চাকমা জানান, এ মুহূর্তে আমাদের করার কিছু নেই। এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নেই। সেটি থাকলে দয়াবতীর জন্য একটি ঘরে করে দেওয়া যেত। সামনে প্রকল্পটি হলে চেষ্টা করব।  যদি অন্য কোনো সুযোগ আসে তাহলে তা দেখব।

বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান বলেন, দয়াবতী বয়স্ক ভাতা পেয়ে থাকেন। তাছাড়াও মাঝে মাঝে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে থাকেন। ঘর নির্মাণে সরকারিভাবে বরাদ্দ চালু থাকলে আমি অবশ্যই চেষ্টা করে দিতাম। তবু আমি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে দেখব, কোনো কিছু একটা করে দেওয়া যায় কিনা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম