সড়ক সংস্কারে অনিয়ম
কাজ দেখতেই যাননি রাসিকের প্রকৌশলী
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীতে সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কার করার কথা থাকলেও সড়ক দুটির ওপরে রেখে দেওয়া হয়েছে পুরোনো কার্পেটিং। পুরনো ইট-খোয়া রেখেই চলছে নামমাত্র সংস্কার। এমনকি কাজটি পরিদর্শনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী যাননি বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার।
জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় লোকাল গর্ভমেন্ট কোভিড-১৯
রেসপন্স ও রিকভারি (এলজিসিআরআরপি) প্রকল্পের আওতায় একই প্যাকেজে সড়ক দুটির সংস্কার
হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে কাজটি বাস্তবায়ন করছে
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
রাসিক ওই প্রকল্প থেকে মোট ৫৩ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ৩৪
লাখ টাকায় নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভদ্রা জামালপুর এলাকা থেকে চকপাড়া পর্যন্ত এক হাজার
৫০ মিটার এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের হড়গ্রাম এলাকায় সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাদশার বাড়ির
সামনে দিয়ে যাওয়া ৩০০ মিটার সড়কের সংস্কার রয়েছে।
এছাড়া জামালপুর-চকপাড়া সড়কের পাশে ৩০০ মিটার ড্রেন সংস্কারও রয়েছে প্যাকেজের
ভেতরে। যৌথভাবে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
গোলাম সারোয়ার ও আল হাদি ট্রেডার্স।
গত রোববার জামালপুর-চকপাড়া সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো সড়ক থেকে কিছু
কার্পেটিং তুলে পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়েছে। তবে পুরো সড়কেই রয়েছে আগের পুরোনো
খোয়া। তার ওপরেই নতুন করে কার্পেটিং করার প্রস্তুতি চলছে। সড়কের ভেঙে যাওয়া রোধে দুপাশে
একটি করে ইট দেওয়া হচ্ছে। এসব ইটের বেশিরভাগই পুরোনো।
নগরীর হড়গ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই সড়কটিও সংস্কার করতে খোঁড়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হড়গ্রামের সড়কটিতে খানাখন্দ ছিল না। তারপরও ভালো সড়ক
সংস্কারের জন্য খোঁড়া হয়েছে। এতে তাদের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। শুধুমাত্র অর্থ লোপাট
করতে ভালো সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এ কাজের যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল
মঈন জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান। এতে তিনি বলেন, ‘হড়গ্রামের রাস্তার
জন্য পরিকল্পনা স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ সাপেক্ষে পরিকল্পনা
গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
জামালপুরের রাস্তার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটির কার্পেটিং তুলে নতুন
এজিং ও বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। এজিং সম্পন্ন হলে ব্ল্যাক টপ রাস্তায় ফেলে রোল করা
হবে। এরপর নতুন খোয়া ফেলে নিয়ম অনুযায়ী কার্পেটিং করা হবে।’
প্রধান প্রকৌশলী জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) সুব্রত কুমার
সরকার এ প্যাকেজের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। এছাড়া কয়েকজন সহকারী প্রকৌশলী কাজ
দেখছেন। তবে কাজ চলাকালে গত রোববার সেখানে সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকৌশলীকে দেখা যায়নি।
ঠিকাদার গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী কখনও আসেননি। আমি তাকে দেখিনি। কোনো
নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্বে আছেন সেটা আমি জানিও না।’
সড়কের পাশে পুরোনো ইট এবং সড়কের বেডে পুরোনো খোয়া ও কার্পেটিং রেখে দেওয়ার
বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তা অস্বীকার করেন ঠিকাদার গোলাম সারোয়ার। পরে তিনি বলেন,
‘এসব ব্যবহার করতে পারব কি না তা সিটি করপোরেশনকে জিজ্ঞেস করেন।’ আরেক ঠিকাদার শাহরিয়ার
শওকত বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারবো না। কাজ দেখাশোনা করেন গোলাম সারোয়ার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত কুমার
সরকার বলেন, ‘এটা ঠিকাদার পারেন না। আমি এটা দেখব।’ এখনও কাজ পরিদর্শন করতে না যাওয়ার
ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাজ শুরুর দিকে একবার গিয়েছিলাম। তারপর আর যাওয়া
লাগে না। যখন কার্পেটিং হবে, তখন আবার আমি থাকব। এখন অন্যরা আছেন।’
