স্ত্রী মেয়েসহ লিটনের বিরুদ্ধে দুদকের তিন মামলা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তার স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহীন রেনি ও বড় মেয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৩০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন লিটনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন।
লিটনের বিরুদ্ধে সর্বমোট ১০ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৪ টাকার সম্পদ অবৈধপন্থায় অর্জনের অভিযোগে এ মামলা করেন মোজাম্মিল হোসেন। লিটনের নিজের ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের ব্যাংক হিসাবে ৫২ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫১ টাকা লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটন করেছে দুদক।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে একটানা ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ করবর্ষের আয়-ব্যয়ের বিবরণী অনুযায়ী ৩ কোটি ৮৬ লাখ ২৩ হাজার ৮৮১ টাকা মূল্যের স্থাবর এবং ৮ কোটি ২৪ লাখ ১১ হাজার ৪৫ টাকা মূল্যের অস্থাবরসহ মোট ১২ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
এই সময়ে তার নামে ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২৪০ টাকা ব্যয়ের তথ্য রয়েছে। ব্যয়ের এই তথ্য বাদ দিয়ে লিটনের নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৬ টাকা। একই সময়ে তার ও পরিবারের নির্ভরশীলদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার ২১৯ টাকা। ফলে ব্যয়সহ মোট আর্থিক সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৫ টাকা। তবে এই আয়ের বিপরীতে লিটনের বিভিন্ন খাতের বৈধ আয়ের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০১ টাকা। তার নিট সম্পদ থেকে গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ বাদ দিয়ে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে লিটনের স্ত্রী ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহিন আকতার রেনির বিরুদ্ধে মোট ১১ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ২৪৫ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছেন মোজাম্মিল হোসেন। মামলার এজাহারের তথ্যানুযায়ী শাহিন আকতার রেনি ও তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ৭৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮০২ টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত করবর্ষে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৫ হাজার টাকার স্থাবর ও ৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অস্থাবরসহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৫ টাকা। একই সময়ে তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গত ১৩ বছরে শাহিন আকতার রেনি মোট ১১ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ২৪৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। একই সময়ে তার বৈধ আয়ের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এই ব্যয় বাদ দিলে তার নিট অবৈধ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ২৪৫ টাকা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল ২০০৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শাহিন আকতার রেনির ১৩টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৭৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮০২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে।
অন্যদিকে লিটন কন্যা ছাত্রলীগ নেত্রী ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮১ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগে তৃতীয় মামলাটি করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে আনিকা ফারিহা জামানের ৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৭৮ টাকার সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আনিকা ফারিহা জামানের নামে ৬৬ লাখ ১২ হাজার ৮১৩ টাকার স্থাবর ও ৫ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ১৮৭ টাকাসহ মোট ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে ২০১৪ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত করবর্ষে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিকসহ ১ কোটি ২৬ লাখ ৮ হাজার ৯১২ টাকার ব্যয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ১২ লাখ ৯২ হাজার ৯১২ টাকা।
মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, লিটন কন্যা এই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে ১৪ লাখ ৫ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৭১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ টাকা, বেতন খাতে ১৮ লাখ ৮ হাজার ১৩১ টাকা, অন্যান্য খাতে ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৮৯ টাকা, মাছ চাষ থেকে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা, অন্যান্য করমুক্ত উৎস থেকে ৫ লাখ ২১ হাজার ৭৫৮ টাকাসহ মোট আয় করেছেন ৭ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকা। কিন্তু দুদকের টিম নথিপত্র ও সরেজমিনে অনুসন্ধান করে তার গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছেন মাত্র ৩২ লাখ ১৩ হাজার ১৩১ টাকা। ফলে আনিকা ফারিহা জামান তার বাবার পদ ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮১ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন ও ভোগদখল করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই লিটন, তার স্ত্রী ও বড় মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা আÍগোপনে চলে যান। এখনো তারা পলাতক রয়েছেন।
