ভাঙ্গায় পৃথক সংঘর্ষে আহত শতাধিক
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার, বাসস্ট্যান্ড দখল ও তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে পৃথক তিনটি স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নারীসহ শতাধিক গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও ৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে গ্রামবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করেছে। পুকুরিয়া এলাকা থেকে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাজার ও বাসস্ট্যান্ড দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও ৫টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ পক্ষের সুলতান মাতুব্বর ও মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর পক্ষের ইয়াকুব মাতুব্বর গ্রুপের মধ্যে পুখুরিয়া বাজার ও বাসস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিগত ১৭ বছর ধরে প্রতি মাসে বাজার ও বাসস্ট্যান্ড থেকে আদায় করা লাখ লাখ টাকা চাঁদা ও খাজনা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে বিএনপির লোকজন তাদের দুই পক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়।
এ ঘটনা নিয়ে শনিবার রাতে ইয়াকুব মাতুব্বর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে নিয়ে অপরপক্ষে সুলতানা মাতুব্বরের দলের জামাল মাতুব্বরের বাড়ি ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনার জের ধরে ঘোষণা দিয়ে রোববার সকালে দুইপক্ষের শত শত গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এ সময় ভাঙ্গা-সদরপুর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও ৫টি বাড়ি অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ফরিদপুর জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্য এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা একজন মহিলাসহ ৮ জনকে আটক করে।
অপরদিকে রোববার সকালে ভাঙ্গা উপজেলা আলগী ইউনিয়নের সুয়াদি গ্রামে আমপাড়া নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সুয়াদী গ্রামের আলী মিয়া লোকজন ও দেলোয়ার মিয়ার গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া পালটাধাওয়ায় এলাকায় রণক্ষেত্র পরিণত হয়। সংঘর্ষে চলাকালে দুইপক্ষের প্রায় ৫০ জন গ্রামবাসী আহত হন। আহতদের ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে আলী মিয়ার দলের শাজাহান মিয়ার আমগাছে দেলোয়ার মিয়া দলের সোহাগের ছেলে তানভীর কয়েকটা আম পাড়ে। আমপাড়া নিয়ে গাছের মালিক শাহজাহান এসে তানভীরকে চড়থাপ্পড় মারে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেলোয়ারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলী মিয়ার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পরে দুইপক্ষের লোকজন ২ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৫০ গ্রামবাসী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে শনিবার রাতে ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর গ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নারীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৫-২০ জন গ্রামবাসী আহত হয়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, আজিমনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর মাতুব্বর ও একই গ্রামের ফারুক ফকিরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। শনিবার বিকালে বিরোধপূর্ণ জমির মাপজোক করার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ বৈঠক করা হয়। সালিশে উপস্থিতি দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রঅস্ত্র, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাতে আহতরা ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আবারও দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫-২০ জন লোক আহত হন। আহতদের ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। দুইপক্ষ ২টি মামলা দায়ের করেছে।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে পুখুরিয়া, সুয়াদী ও আজিমনগর গ্রামের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পুকুরিয়া এলাকা থেকে ৮ জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে।
