সাংগ্রাই উৎসব, জলকেলিতে মেতেছেন মারমা তরুণ-তরুণীরা

বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাইয়ে জলকেলিতে মেতেছেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। প্রচলিত আছে মৈত্রী পানিবর্ষণ বা জলকেলির মাধ্যমে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ তরুণীরা ভাবের আদান প্রদান করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

অতীতের সব ভুলভ্রান্তি দুঃখ-কষ্ট গ্লানি ধুয়ে-মুছে পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার সাংগ্রাই উৎসবে মঙ্গলবার বিকালে কুহালং ইউনিয়নের হেডম্যানপাড়ায় সাঙ্গু নদীর চরে জলকেলি উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং।

এ সময় অন্যদের মধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হ্লা মেনু, উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি নুমংপ্রু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জলকেলি বা মৈত্রী পানিবর্ষণ প্রতিযোগিতায় কুহালং ইউনিয়নের হেডম্যানপাড়াসহ আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোর মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দলবদ্ধভাবে জলকেলিতে মেতে উঠেন।

এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মারমা শিল্পীরা নাচে গানে উৎসব মাতিয়ে তোলেন। দলবদ্ধ নারী-পুরুষ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা এবং তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণের আয়োজন চলে।

উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি নুমংপ্রু মারমা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ে দীর্ঘ সতেরোটি বছর পর হেডম্যানপাড়ায় সাংগ্রাই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। পাড়াবাসীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় সাংগ্রাই উৎসবে মেতেছে।

অপরদিকে বান্দরবানের উজানিপাড়া, জাদীপাড়াসহ পাহাড়ি পল্লিগুলোতে সোমবারও রাতব্যাপী হরেক রকমের পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতা চলে। রাতে বানানো পিঠাগুলো পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করেন তরুণ-তরুণীরা।

এদিকে গত সোমবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন সাঙ্গু নদীর চরে ধর্মীয়ভাবে বৌদ্ধমূর্তি স্নান অনুষ্ঠানে মিলিত হন পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজারও নারী-পুরুষ। তার আগে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু, শ্রমণ এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষেরা খালি পায়ে হেঁটে সাঙ্গু নদীর চরে মিলিত হয় বৌদ্ধমূর্তির স্নান অনুষ্ঠানে। কষ্টিপাথরের কয়েকশ বছরের পুরোনো বৌদ্ধমূর্তিতে পবিত্র জল ঢালা হয় পুণ্যের আশায়। সবশেষে বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা অংশ নেন শত শত নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা।

অন্যদিকে চতুর্থ দিন বুধবার সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ মৈত্রী পানিবর্ষণ বা জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় রাজারমাঠে বিকাল ৩টায়। চলবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।