
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫০ এএম
উলিপুরের ঐতিহ্য সুস্বাদু ‘ক্ষীরমোহন’

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম
-67fe69e37b213.jpg)
উলিপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘ক্ষীরমোহন’। ক্ষীর ও মোহনের সংমিশ্রণে উলিপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ‘ক্ষীরমোহন’ তৈরি করা হয়। স্থানীয়ভাবে মিষ্টির রসকে ক্ষীর বলা হয়। সুস্বাদু এই মিষ্টির স্বাদ নিতে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেকে। এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এলাকার মানুষের কাছে ঈদ, পূজা, বিয়ে বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়ন ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রিয় নাম ‘ক্ষীরমোহন’।
উলিপুর পৌর শহরে সড়কের দুই পাশে সারি সারি মিষ্টির দোকান। সাইনবোর্ডে চোখে পড়ে পাবনা মিষ্টান্ন ভান্ডার, ১ নম্বর পাবনা ভাগ্যলক্ষী মিষ্টান্ন ভান্ডার, মৌসুমী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, আসল পাবনা মিষ্টান্ন অ্যান্ড দধিঘর, ওকে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, পাবনা মিষ্টান্ন অ্যান্ড দধিঘর, শুভেচ্ছা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, পাবনা বনফুল মিষ্টান্ন ভান্ডার- এমন অনেক নাম।
তবে দোকানগুলোতে নেই কোনো বাহারি সাজসজ্জা। এসব দোকানে বিক্রি হয় সুস্বাদু ‘ক্ষীরমোহন’ মিষ্টি।
উলিপুরের প্রবীণ মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮০-এর দশকে পাবনার সিরাজগঞ্জ থেকে মিষ্টির কারিগর হিসেবে সুনিল চন্দ্র মদক উলিপুরে আসেন। সে সময় তিনি প্রথম ক্ষীরমোহন তৈরি করেন। অল্পদিনেই তার এই মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তার দেখাদেখি অনেকেই এই মিষ্টি বানাতে শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাভির দুধ দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে এর সঙ্গে নানা পদের মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই রস। স্থানীয়ভাবে মিষ্টির এই রসকে ক্ষীর বলা হয়। ক্ষীর ও মোহনের সংমিশ্রণে এ মিষ্টির নাম হয়েছে।
অন্যদিকে মোহন বলতে মিষ্টির সাদা অংশকে বোঝানো হয়। দুধ দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরি করে নিয়ে এর সঙ্গে পরিমাণ মতো চিনি ও সামান্য ময়দা মিশিয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি। এরপর চিনির শিরায় ডুবিয়ে আগুনের আঁচে জ্বাল দিতে হয়।
পরে ক্ষীরের মধ্যে ডুবিয়ে সামান্য জ্বাল দিলেই তৈরি হয় ক্ষীরমোহন। দুধ যত খাঁটি হবে, ক্ষীরমোহন তত ভালো হবে। সুস্বাদু ক্ষীরমোহনের এটাই প্রকৃত রহস্য।
আসল পাবনা মিষ্টান্ন অ্যান্ড দধিঘর’–এর যাত্রা ৩৪ বছর আগে। অল্প সময়েই এ দোকানের ক্ষীরমোহনের স্বাদ মানুষের মন ভুলিয়েছে।
এই দোকানের মালিক হরিপদ ঘোষ বলেন, আগে পাবনার সিরাজগঞ্জে তাদের পূর্বপুরুষদের দইয়ের ব্যবসা ছিল। ১৯৮৯ সালে তিনি উলিপুরে এসে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন।
এক কেজি ক্ষীরমোহন তৈরি করতে চার থেকে সাড়ে চার কেজি দুধ লাগে। তাই গরুর দুধের দামের ওপর ক্ষীরমোহনের বাজারমূল্য ওঠানামা করে। বর্তমানে এক কেজি ক্ষীরমোহন ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে দৈনিক গড়ে ক্ষীরমোহন ২৫ থেকে ৩০ কেজি বিক্রি হয়। অন্যান্য দিনগুলোতে ১০ থেকে ১৫ কেজি ক্ষীরমোহন তাদের দোকানেই বিক্রি হয়ে থাকে।
এছাড়া অন্যান্য মিষ্টির দোকানগুলোতে গড়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি ক্ষীরমোহন বিক্রি হয়। এছাড়া মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতি পিস ক্ষীরমোহন চল্লিশ টাকা দরে বিক্রি হয়।
মিষ্টির দোকানগুলোর মধ্যে ‘ওকে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ তুলনামূলক পুরোনো। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সামছুল আলম জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিচিতি রয়েছে সুস্বাদু উলিপুরের ক্ষীরমোহনের। দেশের বাহিরে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এই ক্ষীরমোহন প্যাকেট করে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এলাকার লোকজনের কাছে তো এর বিশেষ চাহিদা রয়েছেই। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উলিপুরে ঘুরতে আসা লোকজন এখানে ক্ষীরমোহন খেয়ে সঙ্গে প্যাকেট করে বাসার জন্য নিয়েও যান।