
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
আনন্দ শোভাযাত্রা-দেশীয় খেলায় মেতে ওঠে রংপুর নগরী

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে ১৪৩২ কে স্বাগত জানিয়ে সারা দেশের মতো প্রাণের উৎসবে মেতে উঠেছে বিভাগীয় নগরী রংপুর।
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার মাঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রভাতি সংগীত পরিবেশন করে।
এর পরে সকাল সোয়া ১০টায় জিলা স্কুল মাঠ বটতলা থেকে জেলা প্রশাসনের এ বর্ণিল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম। বাঙালি আমেজে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণিল বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রা।
এই শোভাযাত্রায় নগরবাসীর নজর কাড়তে, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, জেলে, কামার কুমোর, লাঙ্গল-জোয়াল ও বিয়ের পালকি, রঙিন পোশাকে, বাদ্যযন্ত্রের তালে, গানে গানে আবহমান গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়।
এ সময় শোভাযাত্রাটি দেখতে রংপুরের রাস্তার দুধারে ভিড় করে নগরীর উৎসুক জনতা। পরে শোভাযাত্রাটি জিলা স্কুল মাঠ থেকে বের হয়ে নগরীর কাচারী বাজার, টাউনহল, সিটি বাজার, পায়রা চত্বর, জাহাজকোম্পানী মোড় হয়ে পুনরায় জিলা স্কুল মাঠের বটতলায় গিয়ে শেষ হয়।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত শোভাযাত্রায় অংশ নেন- বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার মো. আবু সাইম।
এদিকে সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদ রংপুরের উদ্যোগে টাউনহল চত্বর থেকে বৈশাখী পোশাকে বর্ণিল আয়োজনে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। টাউনহল চত্বর থেকে বের হয়ে শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হয়।
এর আগে জেলা প্রশাসন রংপুরের উদ্যোগে সকাল ৮টায় জিলা স্কুল বটতলায় জাতীয় সংগীত, এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ১০টায় শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা শেষে ঐতিহ্যবাহী কাবাডি খেলার উদ্বোধন হয় জিলা স্কুল মাঠে। পরে দিনব্যাপী বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয় বটতলায়।
অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র টাউনহল চত্বরে সকাল ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে পুনরায় ফিরে আসে চত্বরে সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মীরা। পরে টাউনহল মাঠে উদ্বোধন হয় বিসিক ও জাতীয় ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পী মেলার। এরপর দিনব্যাপী বাঙলার ঐতিহ্যকে তুলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলবে রাত পর্যন্ত।
এছাড়াও অতীতের থেকে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী বর্ষবরণের আয়োজন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল সোয়া ৯টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আনন্দ শোভাযাত্রার বের করে। আনন্দ শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মাঠে আয়োজিত বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়। বিকালে ব্যাপক আয়োজনে ঘুড়ি উৎসব হয় ক্যাম্পাসে। চলবে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাঙলা বর্ষবরণে গ্রামীণ মেলা, ঘুড়ি উৎসব, মিলন উৎসব, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বৈশাখী মেলা, খেলার আসরের আয়োজন করা হয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এলাকায়। সেই সঙ্গে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণে চিরাচরিত বাঙলার আবহে সাজানো হয়েছে চিকলী ওয়াটার পার্ক, ভিন্নজগত, গ্রান্ড প্যালেসসহ অভিজাত হোটেল, বিনোদন পার্কসহ স্থানীয় অনেক এলাকার ক্লাবগুলো। শুধু তাই নয় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কারাগার, হাসপাতাল, শিশু পরিবারের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদ রংপুরের আহ্বায়ক চৌধুরী মাহমুদ-উন-নবী ডলার বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারেও বাংলা বর্ষবরণে সকালে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ইতিমধ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়েছে। এখন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে থাকা সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান চলবে দিনব্যাপী। তাছাড়া মাঠে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, রংপুরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে বর্ষবরণ উদযাপন করতে পারে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। কোথাও যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য নগরীতে সাদা পোশাকে কাজ করছেন মাঠে একাধিক টিম।