
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৭ পিএম
রংপুর ও লালমনিরহাটে দুই মাসে নির্যাতনের শিকার ১৮ সাংবাদিক

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

আরও পড়ুন
রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট ও রংপুর জেলায় গত দুই মাসে কমপক্ষে ১৮ জন সাংবাদিক পুলিশ ও বিভিন্ন পেশার সন্ত্রাসীদের হামলাসহ মামলার শিকার হয়েছেন।
সারা দেশেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করছেন ভয়ভীতির মধ্যে। এ কারণে অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, রংপুরসহ সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের অতীত ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা এমনকি হত্যার ঘটনায়ও বিচার পাওয়া যায়নি। বিচারহীনতায় দিন দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
এদিকে সর্বশেষ পুলিশের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন রংপুরের বদরগঞ্জের আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি এম এ সালাম বিশ্বাস। গত ১৯ মার্চ বুধবার বিকালে আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি এম এ সালাম বিশ্বাস বদরগঞ্জ থানার মূল ফটক থেকে ১০০ গজ দূরে দাঁড়িয়েছিলেন।
এ সময় থানার ভেতর থেকে পুলিশের একটি পিকআপভ্যান তার সামনে এসে থামে। পিকআপভ্যানের ভেতরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এ দৃশ্য তিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিলেন। তখন কনস্টেবল আল-আমিন তাকে ভিডিও করতে নিষেধ করেন।
এ সময় মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার পর পুলিশের ওই সদস্যসহ পিকআপভ্যান থেকে নেমে এসে আরও তিনজন পুলিশ সদস্য তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে কিলঘুসি মারেন।
এরপর পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে থানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে তাকে বেধড়ক পেটান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এরপর রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হলে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এএসআই রবিউল আলম, কনস্টেবল আলামিন হোসেন ও মজিবুর রহমানকে ক্লোজড করেন।
একই সঙ্গে ওসি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগসহ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আইনজীবী সহকারী পরিচয়দানকারী এবং তাদের সহযোগীদের হামলায় ৮ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
এ সময় দুটি টিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন, ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রাশেদ বাপ্পি, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান জুয়েল, একুশে টিভির ক্যামেরাপারসন আলী হায়দার রনি, খবরের কাগজের রংপুর প্রতিনিধি সেলিম সরকার, কালবেলার রেজওযান রনিসহ ৮ জন সাংবাদিক আহত হন।
এ সময় দুটি ভিডিও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন আহাম্মেদের কাছে লিখিত অভিযোগ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।
গত ১২ মার্চ রংপুরের পীরগঞ্জে সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার পীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম, দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি রতন মিয়া, একাত্তর টিভির উপজেলা প্রতিনিধি আশিকুর রহমান।
এছাড়া গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ প্রকাশ করায় মিঠাপুকুর উপজেলায় কর্মরত স্থানীয় সকালের বাণী পত্রিকার প্রতিনিধি আমিরুল কবির সুজনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলায় হয়েছে।
৩০ মার্চ পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমূল হক সুমনের নির্দেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর আওতায় কল্যানী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নেছার আহমেদ তিনজন সাংবাদিক একাত্তর টিভি ও দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি আব্দুল কুদ্দুস সরকার, আমাদের কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক হরুন-অর রশীদ ও জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক শাহীন মির্জা সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এছাড়া লালমনিরহাটের চ্যানেল২৪ টিভির প্রতিনিধি মাহফুজ বকুলসহ একইভাবে রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলা এবং বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, হুমকি, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এতে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তাহীনায় ভুগছেন।
রংপুরসহ বিভাগে সাংবাদিকদের ওপর এমন ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের নেতারা।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, গত দুই মাসের যে তথ্য রয়েছে আমাদের হাতে তাতে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ১৮ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, মামলার ও হামলার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তা উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দেন এই সাংবাদিক নেতা।