
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
দখল আর দূষণে হারিয়ে গেছে চরভদ্রাসনের ২৪ খাল

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
-67fa69de4ca7e.jpg)
আরও পড়ুন
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় দখল আর দূষণের শিকার হয়ে ২৪টি খালের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। বিগত এক যুগ ধরে উপজেলার অন্তত ২৪টি খালের বিভিন্ন অংশে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে সচল নেই উপজেলার কোনো খাল।
কালের বিবর্তনে পলি মাটি পড়ে নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে উপজেলার সবক’টি খাল। দীর্ঘকাল সংস্কারহীন ও জঙ্গলাকীর্ণ সেই খালগুলোর মধ্যে এলাকাবাসী বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য ফেলে বিষময় করে তুলেছে জনজীবন। খালের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার ফলে উপজেলার কৃষিসেচ, মৎস্য সম্প্রসারণ ও জমিতে পলিমাটির আস্তর পড়াসহ বন্ধ রয়েছে গ্রাম অঞ্চলে সব ধরনের নৌ-যোগাযোগ।
জানা গেছে, উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত খালগুলো হলো- চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেঁষে ঐতিহ্যবাহী বৈরাগী খাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দিকে রয়েছে শ্রীমোহনদির খাল, উপজেলা সদর বাজারের পূর্বদিকে পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল লোহার ব্রিজ খাল, পার্শ্ববর্তী হাজীডাঙ্গী ও বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের খাল, বাদুল্ল্যা মাতুব্বর ডাঙ্গী গ্রামের পদ্মা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হাবজা কাজীর খাল, আব্দুল শিকদার ডাঙ্গী গ্রামের খাল, পাশেই রয়েছে ওকিল উদ্দিনের খাল, এর পশ্চিম দিকে রয়েছে লোহারটেক গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাল, এর উত্তর দিকে মৌলভীরচর বাজারের খালের পূর্বদিকে রয়েছে জাকেরের সুরা ও টিলারচর নামক দুই গ্রামের মধ্যবতি এলাকার খাল। এসব সব খাল দখল আর দূষণে প্রাণহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এছাড়া উপজেলা গাজীরটেক ইউনিয়নে রয়েছে খালপাড় ডাঙ্গী গ্রামের খাল, ছাহের মোল্যার বাজারের পাইকের বিল খাল, মজুমদার খাল, হোসেনপুর গ্রামের খাল, বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের খাল, জয়দেব সরকার ডাঙ্গী গ্রামের খাল, দোপা ডাঙ্গী গ্রামের খাল, হ্রপ্তের চর খাল, স্বরবান্দিয়া ও গাজীরটেক গ্রামের বড় খাল। উপজেলা পদ্মা নদীর অপর পারে রয়েছে চরহরিরামপুর ইউনিয়নের মুন্সির চর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাল, ছমির বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের খাল, পাশেই রয়েছে আব্দুল আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেষে আরেকটি খাল, এর পশ্চিমে রয়েছে উকিল মাঝির কোল ঘেষে বড় খাল আর পূর্বদিকে রয়েছে শালেপুর গ্রামের খাল। এসব খাল নাব্যতা হারিয়ে ও এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
শনিবার দুপুরে উপজেলা গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী বলেন, বিগত দিনে ইউনিয়নের বেশিরভাগ খালের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভরাট করে বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করে নিজেদের দখলে রেখেছেন। খালগুলোর প্রাণ ফেরাতে হলে সরকারিভাবে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া দরকার।
একই দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুন বলেন, উপজেলার খালগুলোর প্রাণ ফেরাতে হলে তালিকা করে প্রকল্প বরাদ্ধের জন্য ঊর্ধ্বতন দপ্তরে লিখতে হবে। অচিরেই আমরা উপজেলার খালগুলো সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবগত করবো।
জানা গেছে, এককালে উপজেলাবাসীর সারা বছরের মাছের যোগান দিত সেসব খাল থেকে। একই সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে সেচকার্য, ফসলী জমির উর্বরতা ফিরিয়ে দেওয়া, পাটজাগ, নৌ-যোগাযোগ, এলাকাবাসী ও গরু ছাগলের গোসলকার্যসহ ঘর গৃহস্থালীর বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতো এসব খাল থেকে।
এছাড়া বর্ষাকালে নৌকা বাইচ ও সারি সারি ঝাঁকি জালে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠতো গ্রামবাসী। কিন্তু কালের বিবর্তনে দখল আর দূষণে এসব খালের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপজেলার কৃষি, শিল্প, মৎস্য ও প্রাণীজ সম্পদ।