
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম
আমতলীতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম
-67f949779e0da.jpg)
আরও পড়ুন
বরগুনায় আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান বাদল খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পাতাকাটা একটি অনাথ আশ্রম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বাদলকে খানকে গ্রেফতার করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা বাদল খানের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
বরগুনা প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ বলেন, আখতারুজ্জামান বাদল আওয়ামী লীগ দলীয়, কালো টাকার ও পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়ে বিগত দিনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এমনকি তার অপকর্মের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের একাধিক ঘটনা রয়েছে। কালো টাকা ও দলীয় প্রভাবই ছিল তার এমন কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি। তিনি বাদল খানের শাস্তির দাবি জানান।
জানা গেছে, বাদল ২০১১ সালে ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হন। এরপর কালো টাকা ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
চাওড়ার পাতাকাটা গ্রামের জুয়েল মাদবর অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক, বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।
তিনি বলেন, তার নির্যাতনের হাত থেকে নিজ দলীয় নেতাকর্মীরাও রক্ষা পাননি। গত ১৬ বছরে অন্তত শতাধিক মানুষকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছেন তিনি। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই নেমে আসত নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার হয়রানি।
স্থানীয় জহির মাতুব্বর বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি ছিলেন আমতলীর গডফাদার। জমি ও খাল দখল, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যি এবং বাজার দখলসহ সব অপকর্মের হোতা ছিলেন তিনি।
উত্তর ঘটখালী গ্রামের বশির উদ্দিন বলেন, উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম ও মহিবুল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে তার ছিল একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা তার নির্দেশে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা পালিয়ে গেলেও তিনি পালাননি। উপজেলা বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় তিনি গত ৮ মাস ধরে অবাধে চলাফেরা করছেন। পুলিশ প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর মামলায় তাকে আসামি করা হয়; কিন্তু বিএনপি নেতাদের সখ্যতায় তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। আরও অভিযোগ রয়েছে বিএনপির ওই প্রভাবশালী নেতাদের মদদে তিনি চাওড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা এলাকার একটি অনাথ আশ্রমের সনাতনী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। খবর পেয়ে চাওড়া ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে ওই আশ্রমে আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
শুক্রবার বিকালে পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
আমতলী সরকারি কলেজ ছাত্রদল সভাপতি ইমন মিয়া বলেন, বাদল খান সন্ত্রাসীদের গডফাদার। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়নি। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তিনি সাধারণ মানুষকে মারধর ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।
চাওড়া ইউনিয়ন যুবদল সদস্য সচিব আখতারুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে ঘরে ঘুমাতে পারিনি। অহেতুক মিথ্যা মামলা দিয়ে বাদল খান হয়রানি করেছেন।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকবার বাদল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছে। তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাদল এত অন্যায় অত্যাচারের পরেও কিভাবে গত ৮ মাস এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির কিছু নেতার কারণে এমন হয়েছে।
চাওড়া ইউনিয়ন যুবদল সাবেক আহ্বায়ক মোমেন আকন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পরে বাদল খানের মামাতো ভাই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী মাহবুবুল ইসলামের বাহিনী আমাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এগুলোও বাদল খানের মদদেই হয়েছে।
তিনি বলেন, দখল, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব অপকর্মের হোতা ছিলেন বাদল খান। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনও নীরব ছিল। তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।
বরগুনা জেলা সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, একাধিক সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিতকারী বাদল খানের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকরা বাদল খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে বিনা খরচে তাদের পক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।